ইবাদত আর বই পড়ে সময় কাটে সালাউদ্দিনের

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের শিলংয়ে ‘আটকা’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। পরিবার-পরিজনহীন নিঃসঙ্গ জীবন। ব্যবসা আর রাজনীতির ব্যস্ততা নেই, পরিবারিক ব্যস্ততাও না। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলায় মাঝে মাঝে আদালতে যে হাজিরা দিতেন, সেটিও এখন আর নেই সাক্ষ্য শেষ হয়ে যাওয়ায়। তাই অখণ্ড দীর্ঘ অবসর। রায়ের অপেক্ষা আর ইবাদত-বন্দেগি ও বই পড়ে সময় কাটে বিএনপির নেতার।

সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে রায় হতে পারে। মামলায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দেশে ফিরতে চান তিনি।

সরকারি কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া সালাউদ্দিন আহমেদ বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হওয়ার পর দলেও একসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। সবশেষ কাউন্সিলের আগে ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। কাউন্সিলের পর ঘোষিত নতুন কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয় তাকে।

২০১৩ সালের শেষের দিকে ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন উত্তাল, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে জেলে, কেউ কেউ আত্মগোপনে, তখন দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন তখনকার যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ।

গ্রেপ্তার এড়াতে অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে পাঠাতেন দলের বিবৃতি ও ভিডিও বার্তা। বেশকিছু দিন এভাবে চলার পর ২০১৪ সালের ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি ভবন থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে একদল অস্ত্রধারী সালাহউদ্দিন আহমদকে ‘অপহরণ’ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

এক বছর  দুই দিন ‘গুম’ থাকার পর ২০১৫ সালের ১২ মার্চ ভারতের পাহাড়ঘেরা রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের গলফ কোর্স ময়দানে চোখবাঁধা অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমদকে পাওয়া যায়।

পরে নানা প্রক্রিয়া শেষে নেগ্রিমস হাসপাতাল থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর ২৭ মে আদালতে তোলা হয় তাকে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৪ দিন বিচারিক হেফাজতে রাখা হয়। পরে ৫ জুন শিলংয়ের আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান বিএনপির এই নেতা।

গত দুই বছর ধরে শিলংয়ে আছেন সালাউদ্দিন আহমেদ। আদালতের অনুমতি ছাড়া শিলংয়ের বাইরে পা রাখা তার জন্য নিষিদ্ধ।

শিলং শহরের ক্যান্টনমেন্টের পাশে একটি ছোট্ট ডুপ্লেক্স কটেজ ভাড়া নিয়ে থাকছেন সালাহ উদ্দিন। সেখানেই তার সময় কাটে। ডাক্তারের নির্দেশনামতো অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করছেন। তিনটি বেডরুম, ড্রইং ও লিভিং রুমের ওই বাসায় ভাতিজা সাফওয়ান ও সবুজ তার দেখভাল করেন। কিছুদিন পর পর বাংলাদেশ থেকে স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সন্তানদের নিয়ে স্বামীকে দেখতে যান। সবশেষ গত ঈদুল আজহার আগে শিলং গিয়েছিলেন হাসিনা আহমেদ।

তবে সামনে মেয়েদের পরীক্ষা বলে আপাতত স্বামীর কাছে যাওয়া হচ্ছে না।  হাসিনা আহমেদ  বলেন, ‘বাচ্চাদের পরীক্ষা আছে তাই শিগগির মনে হয় যেতে পারব না। তবে প্রতিনিয়িত আমাদের যোগাযোগ আছে।’

ব্যক্তিজীবনে সালাউদ্দিন আহমেদ চার সন্তানের জনক। বড় ছেলে কানাডায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। আর মেয়েদের মধ্যে একজন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করে। ছোট দুই মেয়ের সঙ্গে রাজধানীর গুলশানের বাসায় থাকেন স্ত্রী হাসিনা।

জানা গেছে, বিএনপির এই নেতা দীর্ঘদিন ধরে হার্ট ও কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। ভারতে থাকাবস্থায় তার কিডনি ও মূত্রথলিতে সমস্যার জন্য অপারেশন করতে হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন পুরো সময়  স্বামীর সঙ্গে ছিলেন হাসিনা।

সালাহ উদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মঙ্গলবার হাসিনা আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘খুব বেশি ভালো নেই। অপারেশন ভালো হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর অপারেশন পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বুঝা যাবে আসলে কতটা উন্নত হয়েছে।’

নিয়ম অনুযায়ী সালাউদ্দিন আহমদকে শিলং এলাকায় থাকতে হবে। কিন্তু তিনি এর বাইরে যেতে চাইলে আদালতের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া মামলার শুনানির তারিখে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘তার (সালাউদ্দিন) বিরুদ্ধে মামলা একটাই- বেআইনিভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের মামলা। সেটা চলছে, তবে মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতি মাসে মামলার হাজিরা দেন সালাউদ্দিন। ওখানকার আইনজীবীরা এই মামলা পরিচালনা করছেন। আমরা অপেক্ষায় আছি কি রায় হয়, সেদিকে তাকিয়ে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমার স্বামী ভালোয় ভালোয় দেশে ফিরে আসতে পারে।’

মামলার রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে তার সঙ্গে তেমন কোনো কথা আমিও বলি না। সেও বলেন না। তবে তিনি নার্ভাস না। বলেছেন, আল্লাহ ভরসা। নিশ্চয়ই ন্যায়বিচার পাব।

সারঅহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করা সম্পর্কে হাসিনা বলেন, ‘কোরবানির আগে ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে গিয়েছিলাম। তিন দিন ছিলাম। তবে ওদের পরীক্ষা থাকায় শিগগিরই বোধহয় যাওয়া হবে না।’

কীভাবে সময় কাটে সালাউদ্দিন আহমেদের? তার স্ত্রী বলেন, ‘ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত আর অনলাইনে দেশের খবরাখবর দেখে তার সময় কাটে। এর বাইরে তিনি প্রচুর বই পড়েন।’ সবাই তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন দ্রুত মুক্তি দেন।’

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/মোআ)