সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে ৩ মেগাওয়াট

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১৭

বিশাল আকাশের দিকে তাক করে বসানো হয়েছে সারি সারি সোলার প্যানেল। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শিমলাপল্লী এলাকায় এই দৃশ্যটি সকলের নজর কাড়ছে। এটি দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা থেকে উৎপাদিত তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নাম হচ্ছে ‘এনগ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্ল্যান্ট লিমিটেড’। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া (পিডিবি) ৮ একর জমির উপর নির্মিত প্রকল্পে ১১ হাজার ৬১৬টি সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। জার্মানির তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ২৮৫ ওয়াট পিকের হাই এফিসিয়েন্ট মনো-ক্রিস্টালাইন সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৩.৩ মেগাওয়াট।

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ডিজাইনার ও পরামর্শক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই প্লান্টটিতে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃস্বরণ না থাকায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ায় বিপুল পরিমাণ জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃস্বরণ হ্রাস হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন তিন হাজার লিটার জ্বালানির (ডিজেল) প্রয়োজন। সোলার প্যালেনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ায় এই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।

এন্গ্রীণ সরিষাবাড়ি সোলার প্লান্ট লিমিটেডের প্রকল্পের সহ-নির্মাতা ও প্রধান নির্বাহী ইঞ্জি. জাহিদুল আলম বলেন, এই সোলার প্ল্যান্টের মাধ্যমে গত আড়াই মাসের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ইফনিট সোলার পাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। এটি ডিজেল দিয়ে তৈরি করতে প্রায় ২ লাখ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন ছিল যার মাধ্যমে ৫৫০ টন কার্বন নিঃস্বরণ হতো। আমরা এই নিঃস্বরণকে একদমই শূন্যতে নামিয়ে আনতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। ২০২০ সালে দেশের মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সরকারের। সেই হিসাবে ওই সময়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। সারা বিশ্বে সৌরবিদ্যুতের প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। প্যানেলগুলোর দক্ষতা (এফিশিয়েন্সি) বাড়ছে। ফলে অল্প জায়গা ব্যবহার করে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়তেই থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দরা বলছেন, সরিষাবড়িতে পরিবেশবান্ধব এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে খুশি তারা। এই প্রকল্প স্থাপনের পর এলাকার বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেকটাই কমে গেছে।

পিডিবির সরিষাবাড়ী বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, সরিষাবাড়ির এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশে এ রকম আরও সোলার প্ল্যান্ট নির্মিত করা হলে মানবজীবনের জন্য ভালো হবে এবং অন্যান্য জ্বালানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে পরিবেশের উপর ভালো প্রভাব পড়বে।

বেসরকারি খাতে নির্মিত সরিষাবাড়ী সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। জার্মানির একে এ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জার্মানের আইএফই এরিকসেন এজি এবং দেশীয় কোম্পানি কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড যৌথভাবে এই প্রকল্পের মালিকানায় রয়েছে।

এন্গ্রীণ সরিষাবাড়ি সোলার প্লান্ট লিমিটেড ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সংযোগের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং ৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :