বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইসিটি প্রদর্শনী করতে সক্ষম

আসাদুজ্জামান
 | প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৫

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বৃহত্তম সংগঠন অ্যাপিকটা। এই অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, সফল উদ্যোগ, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশ নতুন সদস্য হিসেবে প্রথমবারের মতো এই অ্যাওয়ার্ড আয়োজন করেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই অ্যাওয়ার্ডের আয়োজনসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

বেসিস বাংলাদেশে ‘অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজন করছে সম্পর্কে কিছু শুনতে চাই।

অ্যাপিকটা প্রকৃতপক্ষে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের একটা আইসিটি বিষয়ক প্রতিযোগিতা। এটাকে অস্কার অব আইসিটি বলা হয়। এই অঞ্চলে এই ধরনের কোনো প্রতিযোগিতা আর হয় না। এটাতে ১৭টি দেশ অংশ নেয়। এই ১৭ দেশের অংশগ্রহণ থেকে আমাদের দেশের আইসিটি খাতের অবস্থানটা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারি। আমরা কোন অবস্থানে আছি সেটাও এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ধারণা করতে পারব।

বাংলাদেশ তো অ্যাপিকটার নতুন সদস্য।

আমাদের জন্য সুখের বিষয় হলো আমরা ২০১৫ সালে অ্যাপিকটার সদস্য পদ লাভ করি। পরের বছর ২০১৬ সালে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নেয়। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ২০১৭ সালের অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের আয়োজক দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড আয়োজন নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মাঝে কোনো প্রতিযোগিতা হয় না?

হ্যাঁ হয়। অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডভুক্ত দেশগুলো চায় নিজ নিজ দেশে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করতে। এই শুরু থেকেই প্রতিযোগিতা ছিল। পাকিস্তান তিনবার বিট করেছে। কিন্তু ফেল করেছে। ভাগ্য ভালো যে বাংলাদেশ প্রথমবার বিট করেই সফল হয়েছে।

নবীন সদস্য বাংলাদেশকে কেন ২০১৭ সালের আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচন করা হলো?

আমাদের জয়ী হওয়ার একটা বড় কারণ হলো- বাংলাদেশ সম্পর্কে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। পার্টিকুলারলি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার পরপরই তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের যে ধারাটি আছে, এটি নজরে পড়েছে সবার। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে বড় ধরনের ব্র্যান্ডিং করেছে। এই ব্র্যান্ডিংটা দারুণভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের সময় দেশে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডেরও আয়োজন করা হয়েছে এতে কী ধরনের সুবিধা মিলবে বলে আপনি মনে করেন?

এবার আমাদের এই আয়োজনটা যেহেতু ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি হবে তাই অ্যাপিকটাভুক্ত দেশগুলোর সেখানে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিচ্ছি। ফলে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বুঝতে পারবে বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে সক্ষম। এ ছাড়া ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে বিভিন্ন সেমিনারে অ্যাপিকটার বিচারকরা অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে সবার কাছে খুবই ভালো একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা সম্ভব।

বাংলাদেশ কি অ্যাপিকটার মতো আন্তর্জাতিক মানের অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করতে সক্ষম?

আমরা প্রাকটিক্যালি এই প্রতিযোগিতা কেন এর চেয়ে বড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে সক্ষম। আমরা যেমন ২০২১ সালে ডব্লিউসিআইটি আয়োজন করতে যাচ্ছি। আমাদের সেই ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশকে আর ওভাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই। আমাদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ক্যাপাবিলিটি বেড়েছে। দেশে মেধার চর্চাও বাড়ছে। দেশে প্রচুর লোকজন আছে যারা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, তারা সেমিনার থেকে শুরু করে সবকিছুর ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।

আপনারা অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের আগে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে আরেকটি অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করেছেন।

আমরা অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের আসর বসানোর আগে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড আয়োজন করেছি। আমাদের জন্য বিস্ময়কর ছিল যে, ৩৬০টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তার মধ্যে বাছাই করে আমরা ১৮১টি দলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছি। সেখান থেকে ৫১টি দল বাছাই করা হয়। যেখানে ১৭টি ক্যাটাগরিতে ৫১টি পুরস্কার দেয়া হয়। অনেকটা অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের মতোই।

অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের বাংলাদেশ কয়টি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা করবে?

আমরা ১৭টি ক্যাটাগরিতে ৫১টি পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতায় লড়ব। পুরস্কার পাই-না পাই সেটা পরের ব্যাপার। আমাদের জন্য এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাটাই বড় বিষয়।

বাংলাদেশ ২০১৬ সালের অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডে অংশ নিয়েছিল সেবার কি বাংলাদেশ কোনো সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিল?

গত বছর প্রথমবারের মতো অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন তাড়াহুড়া করে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও আমরা একটা পুরস্কার পেয়েছি। ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেয়েছিল। তারা এনভায়রনমেন্ট নিয়ে একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছিল।

এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

বেসিস এই প্রতিযোগিতার আয়োজক। আয়োজক হিসেবে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমার বিশ্বাস সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি আমরা যেহেতু আয়োজক তাই আশা করব অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে আমরা পুরস্কার জিতব। এ জন্য আমরা সবগুলো ক্যাটাগরিতে লড়ব।

বাংলাদেশ থেকে যেসব দল অংশ নেবে তাদের জন্য গ্রুমিং সেশনের আয়োজন থাকবে নিশ্চয়

বেসিস ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড হয়ে গেলে আমাদের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা গ্রুমি চলবে। আমরাই করাব। আমাদের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি ইজ গুড এনাফ ফর গ্রুমিং। আমরা কিন্তু ২০১৬ সালের অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের বিচারক ছিলাম। আমরা বিচারের পদ্ধতি জানি। আমাদের কাছে সফটওয়্যার আছে। আমরা জানি আমাদের কি প্লেস করা দরকার আছে। তাই গ্রুমিং করার জন্য আমাদের বিদেশি জাজ লাগবে না। তারপর একজন স্ট্যান্ডবাই বিদেশি রাখা আছেন। তিনি থাইল্যান্ডের অধিবাসী। প্রয়োজনে তার সাহায্য নেব।

দেশে অ্যাপিকটার মতো বড় আয়োজন হচ্ছে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা আসবেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

আমি মনে করি না বাংলাদেশে নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। সরকার সবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এ ক্ষেত্রে বেসিসও বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তার কমতি রাখবে না।

অ্যাপিকটার নিয়ম অনুযায়ী আয়োজক দেশের প্রতিনিধি প্রধান বিচারক থাকেন

গত বছর তাইওয়ানে অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশকে ২০১৭ সালের আয়োজক দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তখনই প্রধান বিচারকের দায়িত্বটা আমাকেই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি দেশে এসে ভেবে দেখলাম বেসিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার ইনভলমেন্ট খুব বেশি। বিশেষ করে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং অ্যাপিকটায়। তাই এমন একজনকে দেয়া উচিত যিনি এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আমি অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে আবদুল্লাহ এইচ কাফিকে প্রধান বিচারক হিসেবে নির্বাচিত করি। তিনি অ্যাসোসিওর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের যুক্ত ছিলেন। এখানে যারা অতিথি হয়ে আসবেন তাদের সবার সঙ্গে তিনি পরিচিত। জাজদের সঙ্গেও তার ভালো পরিচয়। ফলে আমার কাছে মনে হয়েছে এই দায়িত্বটা তার কাছে দেয়া যায়। তাই আমার দায়িত্বটা প্রত্যাহার করে তাকে মনোনীত করেছি।

শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন

আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ভেন্যু নির্ধারিত হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের থাকার জায়গা ঠিক হয়েছে। তবে মূল প্রস্তুতিটা হলো আমাদের টিম প্রস্তুত করা। সেটা আমরা ভালোভাবেই করেছি।

অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডের দুই দিন কী কী থাকছে?

এক দিন হবে জাজমেন্ট। শেষের দিন অ্যাওয়ার্ড নাইট। বিচারকরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।

ঢাকাটাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

ঢাকাটাইমসকে এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :