‘দেশে আরও ব্যাংক হলে তা হবে মুদি দোকান’

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২০:০১ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২২:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ‘দেশে এখন ৫৭টি ব্যাংক আছে, আরও নাকি নতুন ব্যাংক করার জন্য পাইপলাইনে আছে। এটা হতে থাকলে ব্যাংক মুদির দোকান হয়ে যাবে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘এক্সপ্লোরিং মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন ইন দ্য কনটেক্স অব দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

এখন ব্যাংকিং আইনে আছে দুজনের বেশি মালিক এক পরিবার থেকে হতে পারবেন না জানিয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘একটি আইন হতে যাচ্ছে এক পরিবার থেকে চারজন মালিক হতে পারবেন। এটা হলে ওই পরিবাই হলো ব্যাংকের মালিক। এখনতো তাও কয়েকটা পরিবার থেকে ব্যাংকের মালিক হচ্ছে বা বিভিন্ন যায়গা থেকে হচ্ছে। কিন্তু চারজন এক পরিবার থেকেই মালিক হলে ভালো পেশাদারের পক্ষে ওই সব দোকানদারিতে (ব্যাংকে) কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। তারা ছিটকে পড়বে।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশনে আছে গভর্নেন্স দেখবে বোর্ড অর্থাৎ মালিকরা, আর অপারেশন দেখবে প্রফেসনাল ব্যাংকাররা। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকের মালিক যেভাবে চালায় সেভাবে ব্যাংক চলছে। অভিযোগ আছে, সরকারি ব্যাংকেতো হচ্ছেই বেসরকারি ব্যাংকেও মালিকরা রীতিমত প্রোপাইটরের মতো অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানার মতো আচরণ করছেন। এর ফলে একজন ভালো পেশাদারের পক্ষে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।’

খ্যাতিমান এই ব্যাংকার বলেন, ‘একটা দুইটা ব্যাংকের কথাতো জানিই নাম নাই বললাম, সে ব্যাংকের এমডিরা টিকতেই পারেন না মালিকের জন্য। তারা টাকা পয়সাওয়ালা এবং লেখাপড়া কম জানা মালিক। মালিক মনে করে আমি তো ব্যাংকের মালিক, এমডিকে টাকা দিই সে কাজ করে। কিন্তু এভাবে একটা ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।’

‘চারজন এক পরিবার থেকে মালিক’ হওয়ার আইনটি যেন না হতে পারে সেজন্য উপস্থিত ব্যাংকারদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকারদের এ বিষয় প্রতিবাদ করে এটা ঠেকিয়ে দিতে হবে। গত বাজেটে ‘ভ্যাট আইন দিয়ে’ আলোচনা হয়েছে, এর ফলে এই আইনটি কর্যকর হয়নি। সে রকম এক জোরালো প্রতিবাদ জানাতে হবে। একটা হৈ-চৈ করে দেখা যাক এ আইনটি ঠেকানো যায় কি না।’ তিনি বলেন, ‘এক পরিবারের চারজন হলে আপনারা চাকরি করতে পারবেন না। আপনাদের জন্য (উপস্থিত ব্যাংকার) বলছি একটু হৈ-চৈ করেন। আমি লেখালেখি করবো, সেমিনার করবো এ আইন যেন না হতে পারে।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বিদেশে ব্যাপকহারে ব্যাংক মার্জার হচ্ছে। সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বড় হওয়ার জন্য মার্জার করে থাকে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য করে। বাংলাদেশেও মার্জ করায় কোনো বাধা নেই। ইচ্ছে করলে দুজন মার্জ করে ব্যবসা করতে পারে। তবে আমাদের দেশে ছোট ব্যাংকগুলোর ধারণা বড়দের সঙ্গে মার্জার হলে তাদের সত্তা থাকবে না। বিডিবিএলের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা হলো দুটো খারাপ প্রতিষ্ঠান মিলে নতুন একটি খারাপ প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। কর্মশালায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক মো. মহিউদ্দিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭২ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা মনে করেন বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ব্যাংক রয়েছে তা কমাতে হবে। তবে ১১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করে ব্যাংকের সংখ্যা ঠিক আছে। আর ১৭ শতাংশ ব্যাংকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক মার্জারের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো সুশাসনের অভাব, বোর্ডের গোপন সুবিধা, রাজনৈতিক দুর্বলতা, মানসিকতার পরিবর্তন, পরিচালকদের দুর্বলতা, নেতৃত্ব এবং কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে মার্জারের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে এ ধারণা কিছুটা নতুন। তবে মার্জারের জন্য যেকোনো সময় আমরা প্রস্তুত আছি। এ বিষয়ে আমরা একটা গাইডলাইন করেছি।’

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি এক্সিট পলিসি (বহির্গমন নীতি) থাকা দরকার। কোনো ব্যাংক খারাপ করলে তাকে এ নীতির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘মার্জার সবসময় খারাপ হয় না। এর ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে হবে। আমাদেরকে গ্লোবালাইজেশনের অংশ হতে হলে মার্জারে যেতে হবে।’

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো চালাতে না পারলে এগুলো প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়া উচিত। সরকারের সৎ ইচ্ছা থাকলে আর্থিক খাতের ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান সম্ভব।’

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/জেআর/জেবি)