তালগাছ প্রেমিক গফরগাঁওয়ের রফিকুল

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
| আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫২ | প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২০:২১

‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে-উঁকি মারে আকাশে’। এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেয় আকাশমুখী এই গাছটির কথা। যদিও আজকাল গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না অগণতি তাল গাছের সারি। সময়ের পরিক্রমায় তালগাছের সংখ্যাও কমে গিয়ে আজ অনেকটাই বিলপ্তির পথে।

বিলপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন গফরগাঁওয়ের লংগাইর গ্রামের ৬৭ বছরের রফিকুল ইসলাম। এই পরিবেশ সচেতন মানুষটি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে রোপন করেছেন কয়েক হাজার তালগাছ। বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় এক হাজার তালগাছ রয়েছে। গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ি থেকে কান্দিপাড়া বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারি সারি তালগাছ পথচারীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। যেসব গাছ লাগালে সকলেই স্বল্প সময়ে বেশি লাভবান হবেন সেসব গাছ লাগিয়ে বাগান গড়ে তুলেন অধিকাংশ ব্যক্তি। কিন্তু তিনি তা না করে তালগাছ রোপন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।

জেলা কৃষকলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে তখনকার ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মীর্জা আল ফারুকের অনুপ্রেরণায় নিজ উদ্যোগে তিনি তালগাছ রোপন প্রকল্প শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে তিন বছর বয়স থেকে ১৭ বছর বয়েসী প্রায় এক হাজার তালগাছ রয়েছে।

তিনি জানান, একটি তালগাছ থেকে সুফল পেতে কমপক্ষে ২০ বছর সময় লাগে। ২০ বছর বয়সী একটি তালগাছ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এছাড়াও বছরে ৩/৪ হাজার টাকার তাল বিক্রি করা যায়। তালগাছের পাতা দিয়ে হাত পাখা, মাদুর, খেলনা ছাড়াও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যায়। তিনি তালগাছ লাগানোর সময় অনেকে বলেছেন- তালগাছ লাগিয়ে লাভ কি। এর স্থলে অন্যগাছ লাগালে দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এ কাজটি করে যাচ্ছি। অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত লাভবান না হওয়ার কারণে তালগাছ দ্রুত বিলপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সকল ধরনের গাছ থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

অদম্য এই তাল বৃক্ষ প্রেমিক রফিবুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি বাবুই পাখি একমাত্র তালগাছের বাসা বাঁধে, সে সময় একটা তালগাছে শত শত বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। অস্বাভাবিক হারে তালগাছ কমে যাওয়ায় এমন দৃশ্য এখন চোখে পড়ে খুবই কম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষ রোপনের বিকল্প নেই। এমন তাগিদ থেকেই ১৯৯৭ সালে তিনি প্রায় তিন হাজার তালের আটি সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগে এলজিইডির রাস্তার দুপাশে আটিগুলো রোপন করেন। তিন বছর পর আটিগুলো থেকে চারা গজিয়ে উঠার পর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়। সে সময় অধিকাংশ তালের চারা নষ্ট হয়ে যায়। তাতেও হাল ছাড়েননি তাল গাছ প্রেমিক রফিকুল ইসলাম। আবার ২০০০ সালে দুই হাজার তালের আটি সংগ্রহ করে রোপন করেন। সেই সময়ের এমপি প্রয়াত আলতাফ হোসেন গোলন্দাজকে দিয়ে গফরগাঁও-বারইহাটি রাস্তা ও বাঙ্গালকান্দি হতে গোলাবাড়ি পর্যন্ত ২৬০ মিটার রাস্তার সংযোগ অংশের দুই ধারে তালের আটি পুনঃরোপন করেন।

সর্বশেষ ২০১৩ সাল পর্যন্ত আটি রোপন করা হয়েছে।

প্রকল্পটির সঠিক পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের সাথে গত ২০০৫ সালের ২১ মে ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ প্রকল্পটি চলতে থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বাড়বে, পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্ম সুফল পাবে। তাল বৃক্ষ প্রেমিক রফিকুল ইসলাম বেশি করে তালগাছসহ বিলুপ্ত প্রজাতির গাছগুলো রোপন করার আহবান জানান।

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :