প্রেমের কারণেই জাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫২

জাবি প্রতিনিধ, ঢাকাটাইমস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের (৪১তম আবর্তন) এক শিক্ষার্থী হলের নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করেছেন। ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম আদনান। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের বি ব্লকের ৪৫০ নম্বর কক্ষে থাকতেন। প্রেমঘটিত বিষয় নিয়েই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। রাতে ক্যাম্পাসে জানাজা শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আদনান একজন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। কিন্তু মেয়েটি ডিভোর্সি হওয়ায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঠিকমতো বনিবনা হচ্ছিল না। আদনান ক্ষুদেবার্তায় তাকে জানান, ‘আমি সুইসাইড করবো।’ মেয়েটি উত্তর দিলো, ‘আর ইউ কিডিং  মি?’ এছাড়াও অপরপাশ থেকে ক্ষুতেবার্তায় এমন সব কিছু লেখা হয়েছে যা থেকে বলা যায় আদনান আত্মহত্যা করছে। এরপরই সম্ভবত ফ্যানের সঙ্গে লাইলনের দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আদনান। এদিকে ওই মেয়েকে ‘ভালবাসা সম্বলিত’ আগস্ট মাসের একটি চিঠি পাওয়া যায় তার রুম থেকে। তবে চিঠির বিস্তারিত জানা যায়নি।

আদনানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি পরিবারের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে থাকতেন। এদিকে তাৎক্ষণিক এই মৃত্যুর খবরে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদনানের রুম (৪৫০/ বি) সিলগালা করে তার মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নিয়েছে।

তবে পরিবার কোন প্রকার মামলা করবে না বলে জানিয়েছেন। রাতে তার লাশ নিতে তার মা ও মামা-মামি ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। আদনানের মা যখন গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে নামলেন তখন তার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে এলাকা। তিনি কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘ আমার ছেলেরে পড়তে পাঠাইছিলাম, পাঁচ বছর পর এ কি হলো?’ ‘আজকে সকালেও আমার বাচ্চাটা কথা কইলো’, ‘আমার বুকটা ফাইটা যাচ্ছেরে আল্লাহ’, ‘ আমি বাঁচবো না ও আল্লাহ...।’

এর আগে বৃহস্পতিবাররাত ১০টার দিকে নিজের কক্ষে আদনানকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা জানিয়েছেন। পরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক ডা. আনায়ারুল কাদির নাজিম মৃত বলে জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, একই বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের জুনায়েদ রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই কক্ষের সামনে যায়। এসময় অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জুনায়েদ দরজার পাশের জানালা দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করে এবং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আদনানকে দেখতে পায়। এই দৃশ্য দেখে জুনায়েদ চিৎকার দিলে আশে পাশের সবাই ছুটে আসে।

রাত একটার দিকে সাভার থানা পুলিশ ও প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৫০/ বি নম্বর কক্ষ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় প্রেমিকাকে নিয়ে আদনানের লেখা একটি চিঠি পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা যায়।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সভাপতি মো. সালাহ উদ্দিন রাজিব বলেন, ‘আমরা তাকে খুব ভালো বলেই জানি এবং সে বিভাগের নিয়মিত ছাত্র ছিল। তবে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা ছিল কি না তা আমরা জানি না।

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/জেডএ)