‘আ.লীগ দুই কারণে আত্মবিশ্বাসী’

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৪

তানিম আাহমেদ, ঢাকাটাইমস

গত দুবারের মতো, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেতার ক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আত্মবিশ্বাসী। তাদের আত্মবিশ্বাসের কারণ দুটি বলে জানিয়েছেন দলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম। আর আত্মবিশ্বাসী দল নির্বাচন সামনে রেখে দলকে প্রস্তুত করার কাজটি প্রায় গুছিয়ে এনেছে।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দলের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন শামীম।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পরে প্রথমবারের মতো দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান শামীম। এর আগে ২০১২ সালেল ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়। ১৯তম সম্মেলনের পরেও তিনি একই পদে থাকেন।

ছাত্রজীবনে নোয়াখালীর এমএ উচ্চবিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এনামুল হক শামীম। ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

জনগণ কেন আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে?

এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাতে আমাদের প্রার্থীরা বিপুলভাবে বিজয়ী হয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নয় বছরের সাফল্যে দেশের মানুষ মনে করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে রাখার জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য এবং বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণ শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করবে, এই বিশ্বাস আমাদের আছে। সব মিলিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।

আগামী নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে আপনাদের আত্মবিশ্বাস কেন?

আত্মবিশ্বাসের মূল কারণ হলো দুইটা। যার প্রথমটি হলো, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হলেন শেখ হাসিনা, আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হলো আওয়ামী লীগ। প্রার্থী জনপ্রিয় দিলে এবং দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় ছাড়া আর কোনো কিছু হবে বলে আমি মনে করি না।

দ্বিতীয়ত. উন্নয়ন তো অনেক। পদ্মা সেতু তো এখন দৃশ্যমান যা অনেকই চিন্তা করতে পারেনি। বাজেট এখন চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা মানুষ চিন্তাও করতে পারেনি। উন্নয়নের অনেক কথা বলা যাবে। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখন সাতের বেশি। পদ্মা সেতু হলে তা আট অতিক্রম করবে।

আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি সাফল্য কোনগুলো?

বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। সরকার জঙ্গিবাদবিরোধী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা সমস্যার মোকাবেলা সফলভাবে করছে। গত দেড়মাস ধরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এর কার্যক্রম চলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পোশাক শিল্পসহ সব সেক্টরেই উন্নয়ন হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে নানা ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে...

চালের দাম বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু এ মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে কিছুটা কমেছেও। চাল আমদানি শুল্ক মুক্ত করা হয়েছে। এ সেক্টরে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। যা নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে।

নির্বাচনের জন্য আপনাদের দলীয় প্রস্তুতি কী কী রয়েছে?

নির্বাচনকে সামনে রেখে আমারা তৃণমূলের পর্যায়ে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত (চট্টগ্রাম বিভাগ) সব জেলায় প্রতিনিধি সভা করেছি। এতে দলের তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা (মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান কমিশনার ও ইউপি সদস্য) সবাই উপস্থিত ছিলেন। এসব বৈঠকে আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনেছি। প্রতিটি সভায় আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) উপস্থিত ছিলেন। তিনি সবার বক্তব্য শুনে করণীয় ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

জেলায় জেলায় আমরা বর্ধিত সভা করেছি। দল ও সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সাথে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি যাতে না হয় এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করাতে পারে এজন্য আমরা সারাদেশে কাজ করছি। আমাদের মূল টার্গেট হলো দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। তাহলে আমাদের বিজয় সহজ হবে।

দলীয় কোন্দল তো স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আপনাদেরকে ভুগিয়েছে সংসদ নির্বাচনেও এমনটি হবে না, এমন আশঙ্কা কি নেই?

আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। আমি এটাকে কোন্দল বলবো না, এটা হলো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। অনেক সময় প্রতিযোগিতাই কোন্দলে রূপ নেই। তবে আমরা সবসময়ই চেষ্টা করছি যাতে কোন্দল না হয়। সবশেষে দিনশেষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রশ্নে এবং দলের প্রশ্নে আপসহীন। এটা ইতিহাসের সাক্ষী।

বিদ্রোহী যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউকে মাফ করে দেয়া হয়, কিন্তু তারা পুরানো পদে আসতে পারেন না। দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবেই থাকেন। ব্যবস্থা নেয়া হয় না এটা ঠিক না।

প্রার্থী বাছাই হবে কোন প্রক্রিয়ায়?

দলের মনোনয়ন ঠিক করবেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। পরীক্ষিত, জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি মূল বিষয়। নির্বাচন তো একটা রণকৌশল, যাকে দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায়, তাকেই তো সেনাপতি করে যুদ্ধে পাঠানো হবে।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিলম্বের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

খালেদা জিয়া কেন বিদেশে গেছেন তা কিন্তু পরিষ্কার না। প্রধানমন্ত্রীর গলব্লাডারে অপারেশন হয়েছে কিন্তু তিনি তো চিকিৎসার জন্য যাননি, রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন। যাওয়ার পরে হঠাৎ ব্যথা হয়েছে এবং অপারেশনও হয়েছে। যা দেশবাসীকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়া কি আসলেই অসুস্থ? কীসের চিকিৎসা চলছে? তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে দেশবাসী বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে কি না?

আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৩ তারিখ মিয়ানমারে যাচ্ছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মিয়ানমারের কাছে কিছু আশা করি। মিয়ানমারের বাসিন্দাদের তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। আমরা প্রতিবেশী হিসাবে যা করার তা করছি।

বিএনপি অভিযোগ করছে বিভিন্ন দেশের ত্রাণ বিতরণ করে আওয়ামী লীগ কৃতিত্ব নিচ্ছে...

মাঠে তো আমরা আছি, তারা নাই। মির্জা ফখরুল ইসলাম একদিন গিয়ে ছবি তুলে চলে আসছেন। আমাদের সাধারণ সম্পাদক সেখানে ২২ দিন ছিলেন। আমি এক মাসেরও বেশি ছিলাম। আমরা মাঠে কাজ করবো, আর এসি রুমে বসে শব্দবোমা ফাটানো ভিন্ন কথা। আমরা সেখানে খেটেছি। যেখানে যে সমস্যা আছে তা সমাধান করেছি। আমরা থাকতেই কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছেন।   

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/টিএ/ডব্লিউবি/জেবি)