তাজমহলের ইতিহাস পাল্টে দেব: বিজেপি সাংসদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৩৫ | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৩১

তাজমহলের ঐতিহ্যকে কটাক্ষ করে ভারতের উত্তর প্রদেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক নেতা বলেছেন, ওই স্মৃতিসৌধ ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক। একই সঙ্গে, তাজমহলের স্রষ্টাকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে তিনি ইতিহাস বদলেরও হুমকি দেন।

উত্তরপ্রদেশের সারধনায় রবিবার বিজেপির এক জনসভা ছিল। সেখানে ভাষণ দিচ্ছিলেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সংগীত সোম।

২০১৩ সালেন মুজাফফরনগরে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। ওই দাঙ্গায় ৬০ জন মারা গিয়েছিল। সোমের উসকানিমূলক বক্তব্য ওই সময় দাঙ্গা বাধিয়েছিল।

তিনি মুগল ইতিহাসকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন, ‘রাজ্যের পর্যটন পুস্তিকায় তাজমহলের নাম বাদ পড়ায় নাকি অনেকেই ভীষণ হতাশ! আমরা কোন ইতিহাসের কথা বলছি?’ এরপরেই তার সংযোজন, ‘তাজমহলের স্রষ্টা (শাহজাহান) নিজের বাবাকেই বন্দি করেছিলেন। মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন হিন্দুদের অস্তিত্ব। এরাই যদি আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকেন, তা হলে তা খুবই দুঃখের। আমরা এই ইতিহাস বদলে দেব।’

বিজেপি নেতা সংগীত সোম

সোমের ওই মন্তব্যের পরে ফের অস্বস্তিতে পড়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। পাশাপাশি বিজেপির মুখও পোড়ে।

সেই অস্বস্তি কাটাতে তড়িঘড়ি সরকার এবং বিজেপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘তাজমহল আমাদের গর্বের ঐতিহ্য’! পাশাপাশি বলা হয়, ওই মন্তব্য বিধায়কের একান্তই ব্যক্তিগত। তার সঙ্গে দল বা সরকারের কোনও যোগ নেই।

উত্তরপ্রদেশের পর্যটনমন্ত্রী রীতা বহুগুনা জোশি বলেন, ‘তাজমহল নিয়ে ওই ভাবনা সাংসদের একান্তই ব্যক্তিগত। যোগী আদিত্যনাথ এবং আমি মনে করি, তাজমহল আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আগরা এবং তাজমহলের উন্নতির কাজে আমাদের সরকার দায়বদ্ধ।’

কিন্তু এত কিছু বলেও সমালোচনার ঝড় আটকানো যায়নি।

সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র সিপি রাই বলেন, ‘বিজেপি ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ইতিহাস বদল করা যায় না। ইতিহাসের কাছ থেকে আমাদের ভালো-মন্দ- দুটোই শেখা উচিত। নিচু মানসিকতার মানুষরাই এমন মন্তব্য করতে পারেন!’ প্যাঁচে পড়ে বিজেপিও এখন সোমের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছে।

বিজেপি নেতা জিভিএল নরসিংহ রাও বলেন, ‘যে যার নিজের মত প্রকাশ্যে বলতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে সেটাকেই আমাদের পার্টি লাইন বলে ধরে নেয়ার কোনও মানে নেই।’

সোমের ওই মন্তব্যের পরে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘লালকেল্লাও তো মুগলরা বানিয়েছিল। তা হলে কি মোদি এ বার থেকে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা ভাষণ দেয়া বন্ধ করে দেবেন?’

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোম ওই মন্তব্য করেছিলেন, তা ছিল একটি বুকলেট। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে সেটি প্রকাশিত হয়। রাজ্যে পর্যটনের প্রসার ঘটাতে প্রকাশিত ওই পুস্তিকায় রাজ্যের বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্রকে তুলে ধরা হয়। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর প্রধান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গোরক্ষপুর মন্দির থাকলেও বাদ পড়ে তাজমহল। এরপরেই বিরোধীরা সরব হয়।

দেশীয় তো বটেই, বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও অভিযোগ করা হয়, যোগী সরকারের হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণেই উপেক্ষিত তাজ। মুসলিম আমলে তৈরি হওয়ার জন্যই তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

প্রথমে যোগী আদিত্যনাথও একই ধরনের মন্তব্য করেন। জানিয়ে দেন, তাজমহল এ দেশের ঐতিহ্য নয়। কিন্তু পরে চাপের মুখে তিনি ও তার সরকার উল্টো কথা বলেন। সেই বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, ফের একই বিতর্কে ঘি ঢাললেন সংগীত সোম। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে যোগী সরকারকে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :