বরগুনায় ভেস্তে যাচ্ছে মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম

নাঈমুল হাসান রাসেল,বরগুনা
 | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৫৩

জনবল সংকট, অর্থাভাব ও দ্রুত গতির নৌযানের অভাবে বরগুনার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীর বিস্তৃর্ণ এলকায় মা ইলিশ রক্ষার জন্য জোরালোভাবে টহল দিতে পারছে না বরগুনার মৎস্য বিভাগ। এ সুযোগে অসাধু জেলেরা শিকার করছে মা ইলিশ। অসাধু জেলেদের মা ইলিশ শিকারের কারণে মা ইলিশ রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। ভেস্তে যেতে বসেছে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ। এ কারণে এ বছর ইলিশের উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পাবে বলে মনে করেন মৎস্যজীবীরা।

আশ্বিন মাসের মধুপূর্ণিমার আগের তিন দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন মা ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজননকাল চিহ্নিত করেছেন মৎস্য গবেষকরা। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু জনবল সংকট অর্থাভাব ও দ্রুত গতির নৌযানের অভাবে বরগুনার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে মা ইলিশ রক্ষার জন্য জোরালোভাবে টহল দিতে পারছে না বরগুনার মৎস্য বিভাগ। ফলে অসাধু জেলেরা মৎস্য বিভাগের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিকার করছে মা ইলিশ।

পাথরঘাটা উপজেলার ট্রলার মালিক মো. আফজাল হোসেন জানান, এবছর জোরালো টহলের আওতার বাইরে থাকছে বলেশ্বর নদীর ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার বিস্তৃর্ণ এলাকা। ফলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও প্রতিদিন মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। এসব মাছ অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না মৎস্য বিভাগ।

বলেশ্বর তীরের জেলে আসলাম জানান, ট্রলারে করে সৎস্য বিভাগ টহল দিলেও অনেক সময় তাদের উপস্থিতিতেও মা ইলিশ শিকার করছে অসাধু জেলেরা। দ্রুত গতির নৌযান না থাকায় তাদের আটক করতে পারছে না মৎস্য বিভাগ। এছাড়াও গত বছরের তুলনায় এবছর মৎস্য বিভাগের জোরালো টহল নেই বলেশ্বর নদীতে। এ সুযোগে প্রতিদিনই মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। বিষয়টি মৎস্য বিভাগ অবগত থাকলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তাফা চৌধুরী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর মা ইলিশ রক্ষার জন্য মৎস্য বিভাগের জোরালো টহল না দেয়ার কারণে ইলিশের উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হবে। ফলে জেলেদের আবারো দুর্দিন দেখা দেবে। গত বছর অধিক পরিমাণে মা ইলিশ রক্ষার কারণে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছিল। এর ফেলে ইলিশের দাম যেমন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল, তেমনি ট্রলার মালিক ও জেলেরাও লাভবান হয়েছিল।

বিষয়টি স্বীকার করে বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন প্রামানিক বলেন, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের অর্থের অভার বয়েছে। রয়েছে জনবল সংকটও। তারপরও আমার আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে মা ইলিশ রক্ষার জন্য দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এক মা ইলিশও যাতে কেউ শিকার করতে না পারে, সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।

অর্থাভাব দ্রুত গতির নৌযানের সংকট এবং জনবল সংকটের কথা অস্বীকার করে এ বিষয়ে বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ১ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত জেলার পায়রা, বলেশ্বর, বিষখালী ও বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যেই ৮৮ হাজার মিটার জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের অপরাধে আটকের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে ১০ জেলেকে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ৩৬৯ কেজি মা ইলিশ উদ্ধার করে স্থানীয় এতিমখানায় বিলিয়ে দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :