জোর করে ‘বাঙালি কার্ড’ ঝুলিয়ে দিচ্ছে বর্মি সেনারা

মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে
 | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৩৫

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সবার গল্প যেন একই। কষ্ট, দুর্ভোগ, ক্ষুধা, আতঙ্ক আর নির্যাতনে স্বজনহারাদের আর্তি মুখেমুখে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের নাফ নদী পেরিয়ে দলে দলে আসছে।

তবে হঠাৎ করে তাদের আসার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আজ সোমবার একদিনেই অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা এসেছে বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্মি ভাষায় বাঙালি লেখা কার্ড জোর করে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের গায়ে। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেয় মিয়ানমারের সেনারা।

রোহিঙ্গারা জানান, নতুন করে হিংসাত্মক আচরণের কারণে বুচদিং এর ১৪টি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে তারা দলে দলে এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

বুচিদং নয়ংশপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ ফয়েজ উল্লাহ (৪৮) ঢাকাটাইমসকে জানান, নয়ংশপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকতা করতেন তিনি। কয়েকদিন থেকে বর্মি সেনা ও রাখাইন যুবকেরা মাদ্রাসাটি দখল করে সেখানে ক্যাম্প করেছে। ওই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা লোকজনদের ডেকে এনে বর্মি ভাষায় বাঙালি লেখা কার্ড নেয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি করছে।

সামরিক জান্তার নয়া কৌশল অনুমান করতে পেরে শিক্ষিত রোহিঙ্গারা এসব কার্ড গ্রহণ করেনি। ক্ষিপ্ত হয়ে বর্মি জান্তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ধান, চাল লুট করছে।

বুচিদং মুরাপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে আনজিমানপাড়া বেড়িবাঁধে নয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বসে আছেন মো. মিয়া (৫৮)। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, মিয়ানমার সেনারা এবার শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে না। তবে বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করছে। বিতরণ করছে সাদা কার্ড। কার্ড নিতে অসম্মতি জানালে তাদের হাতে থাকা বন্দুক থাক করে রাতারাতি দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কারণে বুচিদংয়ের বাপিডিপো, নাইছাদং, চিংদং, লাউয়াদং, নয়াপাড়া, চান্দেরবিল, লম্বাবিল, জংমং ও প্রংফোপাড়াসহ ১৪টি গ্রামের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ছয় দিন ডাহাড় জঙ্গল, খাল ছড়া পেরিয়ে সোমবার ভোররাতে নাফ নদীর এপারে চলে এসেছে।

চান্দেরবিলের আবদুল আমিন (৩৫) ঢাকাটাইমসকে জানান, তারা সবাই মিয়ানমারের ফাতিয়ারপাড়া ঢালা নামক স্থানে জড়ো হন বুধবারে। সেখানে বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত তারা অবস্থান নেন রাস্তায় ফেলে আসা স্বজনদের জন্য। শনিবার ভোররাতে মিয়ানমার সেনা ও সশস্ত্র রাখাইন যুবকেরা তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। এসময় দিকবিদিক ছোটাছুটি করে পালাতে গিয়ে ৫০ জনের মতো বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা বেঁচে আছে কি না জানা নেই।

শতাধিক শিশু ও গর্ভবর্তী নারী নিখোঁজ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ করুণ কাহিনি বলার সময় তার দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মনজুর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী ঢাকাটাইমসের কাছে রোহিঙ্গাদের নতুন করে ঢল নামার কথা স্বীকার করেছেন। তবে সংখ্যাটা কত হবে সে ব্যাপারে তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। তবে গ্রামবাসীর ধারণা, আজ একদিনেই যে পরিমাণ রোহিঙ্গা নাগরিক এসেছে তাদের সংখ্যাটা অর্ধ লাখের বেশি হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :