আ.লীগ নেতার ওপর হামলা: চার দিনেও মামলা হয়নি

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১৩

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ নুর মোহম্মদের ‍ওপর হামলার ঘটনার চার দিন পার হলেও এখনো থানায় কোন মামলা হয়নি। বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নুর মোহম্মদের উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার দিনে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও হামলার শিকার আইনজীবীদের সাথে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ ওই নেতার উপর হামলার ঘটনাটিকে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে ধীরগতিতে তদন্ত করছেন। তারা এই হামলার ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের এই ভূমিকার জন্য সমিতির অনেক আইনজীবী ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা চাইছেন যারা এই হামলার ছক কষে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নুর মোহম্মদের উপর হামলা করিয়েছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে পুলিশ।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে আইনজীবী নুর মোহম্মদের উপর হামলার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করেছে। সভা থেকে এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজে বরাদ্দকৃত টাকার স্বচ্ছতা রাখতে সরকারিভাবে দায়িত্ব নিয়ে করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন আদালতে করা মামলার বাদী ও জেলা বারের সদস্য আইনজীবী এস এম জিন্না।

এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নুর মোহম্মদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি ধীরেধীরে সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন।

গত শনিবার সকাল নয়টার দিকে বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা নুর মোহম্মদের উপর হামলা চালায়। জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থলোপাটের বিরুদ্ধে সমিতির নেতাদের নামে মামলা করায় তার উপর এই হামলা হয়েছে বলে তিনি শুরু থেকে দাবি করে আসছেন। তবে আইনজীবী সমিতিও তার করা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হামলার শিকার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ নুর মোহম্মদ বলেন, দিনদিন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া ডান পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। আমি সুস্থ হয়ে বাগেরহাট ফিরে মামলা করব। তিনি অভিযোগ করেন, বারের সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুর ভাড়াটে সন্ত্রাসী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে আমার উপর এই হামলা হয়েছে। সে আগেই আমার বাড়ির কাছে লোকজন নিয়ে হাতুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি জেলা জজের বাসভবনের সামনে পৌঁছলে কাদেরের নির্দেশে ওর সহযোগীরা হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে শহরের দিকে মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। আমি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গত ১৪ অক্টোবর সকাল সোয়া আটটা থেকে সাড়ে আটটা। বাগেরহাট-খুলনা সড়কের শহরের সোনাতলা এলাকায় চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল এসে থামে। তাতে ২০ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী অন্তত আট থেকে নয়জন মোটরসাইকেল থেকে নেমে অবস্থান নেন। এদের মধ্যে আমরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আব্দুল কাদেরকে চিনতে পারি। অন্যদের আগে কখনো দেখিনি। তাদের দুই তিনজনের হাতে হাতুড়ি দেখতে পাই। নুর মোহম্মদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে জেলা জজের বাসভবনের সামনে পৌঁছলেই এই যুবকরা তার উপর হামলা শুরু করে। আমরা দূর থেকে তা দেখেছি তবে ভয়ে সামনে প্রথমে যাইনি। সাত আট মিনিট পর তারা সবাই মোটরসাইকেলে চড়ে বাগেরহাট শহরের দিকে চলে যায়।

জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থলোপাটের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী ও বারের সদস্য আইনজীবী এস এম জিন্না বলেন, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চার কোটি ৪৪ লাখ তিন হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। বর্তমান কমিটি নিয়মবর্হিভূতভাবে পুতুল ঠিকাদার নিয়োগ করে বারের সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু নিজে লাভবান হচ্ছে। আমি ও আমার আরেক সদস্য এ্যাডভোকেট খান মোহম্মদ আলী বাদশা এই অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে আদালতে মামলা করি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। এছাড়া গত ১ অক্টোবর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্মানাধীন বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজে বরাদ্দকৃত টাকার স্বচ্ছতা রাখতে সরকারিভাবে দায়িত্ব নিয়ে তা সম্পাদন করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি। এসব কারণে তারা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন সময়ে আমাদের ও মামলার বাদী শেখ নুর মোহম্মদকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আমরা তাতে রাজি না হওয়ায় বারের সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নুর মোহম্মদের উপর হামলা করিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, বাগেরহাট আইনজীবী সমিতির সদস্য শেখ নুর মোহম্মদের উপর হামলা সংবাদ গনমাধ্যমে দেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অথচ আমাদের সমিতি হামলার ঘটনার চারদিন পর মঙ্গলবার লোক দেখানো একটি সাধারণ সভা করেছে। তারা নিন্দা আর আর্থিক সাহায্য করা ছাড়া তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। ঘটনার চারদিন পার হলেও পুলিশ এখনো জড়িতদের ধরতে পারেনি। পুলিশ সমিতির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে হামলায় জড়িত আসামিদের ধরতে গাফিলতি করছে।

হামলার পরিকল্পকারীর হিসেবে নাম আসা বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য শেখ নুর মোহম্মদের উপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার সাধারণ সভা করে তীব্র নিন্দা, হামলাকারীদের চি‎হ্নিত করে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা ও মামলার সব বিষয়ে খরচ যোগাবে সমিতি। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, এই আইনজীবীর উপর হামলার ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি ও আমার পরিষদ চাই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে হামলার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আব্দুল কাদের বলেন, আমি হামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নুর মোহম্মদের উপর হামলার ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন কাদের।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শেখ নুর মোহম্মদের উপর হামলা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তা পুলিশের কাছে পরিষ্কার। হামলার শিকার আইনজীবী বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রয়েছেন। তিনি অসুস্থ থাকায় তার কাছ থেকে আমরা এখনো কোন তথ্য পাইনি। তাছাড়া এখনো মামলাও হয়নি। তিনি মামলা করলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)