মানবতায় পুরস্কৃত হলেন চৌকিদার

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল

বিপদগ্রস্ত এক তরুণীর পাশে পুলিশ  দাঁড়ায়নি। মানবিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন চৌকিদার। মঙ্গলাবার বিকালে ওই তিন চৌকিদারের মানবতার স্বীকৃতি দিয়েছেন দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির।

উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বাবলুর উপস্থিতিতে তাদের হাতে শুভেচ্ছা পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এসময় তিনি চৌকিদার দফাদারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা তুলে ধরেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৮০ জন চৌকিদারের  প্রত্যেককে একটি করে বাই-সাইকেল কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শিগগির এটা বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে শুভেচ্ছা উপহার পেয়ে এমনকি সাইকেল দেয়ার ঘোষণায় অভিভুত হন দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের রুবেল,শাহীনুর ও খুশি মোহন নামে ওই তিন চৌকিদার।

জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমসে গত শুক্রবার রাতে ‘এক বিপদগ্রস্ত তরুণীর গল্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ওইদিন রাত আটটায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সদরের চরপাড়া মাস্টার বাজারে  ১৮/২০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন এক অজ্ঞাত তরুণী বসাছিল। কেউই তাকে চিনতে পারছেন না। বিপদগ্রস্ত তরুণীকে নিরাপদ আশ্রয়ে দেয়া ও তার স্বজনদের নজর কাড়তে ঢাকাটাইমসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবিরের। ওই সময় তিনি নাটোরে থাকার পরও মুঠোফোনে দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের টাঙ্গাইলের ডিডিসহ অনেকের সাথে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন।

কম বয়স আর এ ধরনের অজ্ঞাত ভারসাম্যহীন তরুণীর পাশে দাঁড়াতে প্রথমে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করে। এমনকি দেলদুয়ার থানাও মেয়েটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেননি। চৌকিদারদের সাথে দেলদুার থানার পুলিশ সৌজন্যমূলক আচরণ করেনি বলেও অভিযোগ চৌকিদারদের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন, ইউপি চেয়ারম্যানের ফোন এবং চৌকিদারে উপস্থিতি কোনটিতেই একটি রাতের জন্য তরুণীর দায়িত্ব নেয়নি পুলিশ।

পরে দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের বাবলু ঢাকায় থাকায় তিনি তার পরিষদের রুবেল, শাহীনুর ও খুশি মোহন নামে ওই তিন চৌকিদারকে দায়িত্ব দেন মেয়েটি দেখাশোনার। ওই রাতেই ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে এনে থানায় রাখার চেষ্টা করে ওই চৌকিদাররা। থানা গ্রহণ না করায় বিপদগ্রস্ত ওই তরুণীকে পুরো রাত সদর ইউনিয়ন পরিষদে রেখে পাহারা দেয় ওই চৌকিদাররা।

রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই মেয়েটিকে টাঙ্গাইল শিশু পরিবার বালিকাতে আশ্রয়ের জন্য নিয়ে যায়। ওখানেও বিড়ম্বনা। সাথে রইলো সেই চৌকিদার আর সিএনজি চালক। এক মুহূর্তের জন্যও চৌকিদার খুশি মোহন সরতে পারছেন না। সাথে সিএনজি চালক শাহিনুর। শিশু পরিবার বালিকায় আশ্রয়েরর জন্য আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য কোর্টে। সেখানেও ওরা দুজন। কোর্ট পুলিশ বলে দিলেন, লোকাল থানায় জিডি সাপেক্ষে অনুমতি লাগবে। কোর্টে মানুষের ভিড় দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল মেয়েটি। ওখানেও অভিভাবকের দায়িত্ব নিলেন চৌকিদার।  আবারে দেলদুয়ার থানায় আনা হল তরুণীটিকে। সাথে সেই চৌকিদার খুশি মোহন। দেলদুয়ার থেকে আবার নেয়ার পরে আদালতের নির্দেশে তরুণীটিকে গাজীপুরের পুবাইল সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দেলদুয়ার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন কবির জানান, এটা একটি মানবিক বিষয়।  ওদের মানবিকতা হৃদয় স্পর্শকাতর করার মতো। মানবকিতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এই শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, এই গ্রাম পুলিশদের নানা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের অংশীদার করানো যায়। সাধারণ মানুষকে যেন চৌকিদাররা দ্রুত সেবা দিতে পারে এর জন্য উপজেলার ৮০ জন চৌকিদারকেই একটি করে সাইকেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/আরকে/এলএ)