শেরপুরে ফাঁদ পেতে চলছে বন্য হাতি নিধন
শেরপুর সীমান্তে ফাঁদ পেতে হত্যা করা হচ্ছে বন্য হাতি। গত এক মাসে শ্রীবরদীর রানী শিমুল ইউনিয়নে ফাঁদের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তিনটি হাতির মৃত্যু হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের দাবি, ফসল রক্ষা করতেই তারা ফাঁদ পাততে বাধ্য হচ্ছেন।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে এভাবে হাতি হত্যা অপরাধ হলেও বন বিভাগ বলছে, রাজনৈতিক নেতাদের চাপে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারছে না তারা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুরের সীমান্ত ঘেঁষা নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্য হাতির আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। ধান পাকা শুরু হলে জমিতে আর বিভিন্ন ফলবাগানে মাঝেমধ্যে হানা দেয় ক্ষুধার্ত হাতির দল। তাই ফসল বাঁচাতে জেনারেটরের তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে রাখে স্থানীয়রা। আবার কীটনাশক লাগানো ধানের থোড় খেয়ে বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতেও হাতির মৃত্যু হচ্ছে।
ফাঁদ পেতে হাতি নিধনের ঘটনায় বন বিভাগ বিভিন্নœ গ্রামে অভিযান চালিয়ে হাতি হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
বন বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বিনা কারণে বন্য হাতি হত্যার শাস্তি সর্বনি¤œ দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর একই ব্যক্তি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলে ১২ থেকে ১৫ বছরের জেল এবং ১৫ লাখ টাকা অর্থদ-ের কথা বলা আছে বন আইনে।কিন্তু হাতির হানা থেকে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বন আইনের শাস্তির কথা কমই মনে রাখেন গ্রামবাসী। শ্রীবরদীর রানী শিমুল গ্রামের আজমত শেখ বলেন, ‘এখন আমন আবাদের ভরা মৌসুম চলছে। অনেক ক্ষেতে ধানের থোড় এসেছে। ২৫-৩০টি হাতির একটি পাল একসঙ্গে থোড় খেতে মাঠে নেমে মুহূর্তে সাবাড় করে করে জমি। তাই ফসল বাঁচাতে ফাঁদ পাততে আমরা বাধ্য হচ্ছি।’
ধানে জমির পাশাপাশি কখনো ফলবাগানেও ঢুকে পড়ে হাতির দল। সেখানেও পাতা হয় ফাঁদ। ঝিনাইগাতীর গান্ধীগাঁও গ্রামের রিকশাচালক হোসেন মিয়া বলেন, ‘ফলবাগান রক্ষা করতেই জেনারেটরের মাধ্যমে তার দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। এখন যদি হাতি এসে তারে জড়িয়ে যায় তাহলে আমাদের কী করার আছে।’
একের পর এক হাতি নিধনের কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন শাইনের নির্বাহী পরিচালক মুগনিউর রহমান মনি। তিনি বলেন, ‘হাতি প্রকৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। গারো পাহাড়ে দল বেঁধে হাতি বসবাস করে আসছে। হাতির সঙ্গে প্রায়ই মানুষের সংঘাত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে, রামদা ব্যবহার করে, আগুন বা শিক দিয়ে, অনেক সময় ওপার থেকেও বুলেট বিদ্ধ হয়ে এপারে এসে মারা পড়ছে হাতি। এভাবে যদি হাতি মারা পড়তে থাকে তাতে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে পরিবেশ।’ তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হাতি রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বন্য হাতি হত্যার ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করছে না বন বিভাগ। আর এ জন্য তারা রাজনৈতিক চাপকে দায়ী করছে। শ্রীবরদীর বালিজুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক চাপে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। তবে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম।
হাতি নিধনে মামলা না হলেও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, হাতির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে স্থানীয় ইউএনও, প্রাণিসম্পদ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মারা যাওয়া হাতিগুলোর ময়নাতদন্ত হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট পাওয়া গেলে জানা যাবে হাতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/মোআ)