৫০ হাজার টাকায় মায়ের অপমৃত্যু বিকিয়ে দিলো সন্তানরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:০৮

সাংসারিক টানাপড়েনে জর্জরিত স্বামীহারা দুই সন্তানের মা মালেকা বেগম একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নিয়েছিলেন কর্মচারী হিসেবে। বাসন মাজা থেকে শুরু করে হোটেল পরিষ্কার করা ছাড়াও বাবুর্চিকে সহায়তা করতেন রাতভর। বিনিময়ে এক বেলা খাবার ও তিনশ টাকা পাবেন এমন শর্তেই রাজি হয়ে কাজ করছিলেন মালেকা। কারণ সন্তানের বোঝা হয়ে থাকার চেয়ে অল্প মজুরিতে রাত জেগে কাজ করাটাই তার কাছে ছিল শ্রেয়।

তবে জীবন সংগ্রামে হার না মানলেও শেষ পর্যন্ত নিয়তির কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধের পর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মম মৃত্যু কপালে জুটলো তার। তবে এতে যেন ভালো হয়েছে তার পরিবারের। রাতের আঁধারে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ‘মিটমাট’ শব্দে ৫০ হাজার টাকায় অভিযোগ না করেই মায়ের এমন মৃত্যুকে বিকিয়ে দিতেও পিছপা হননি সন্তানরা।

এদিকে নিম্নমানের সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ ঘটলো এর কারণ অনুসন্ধান ও সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে আইনের আওতায় না এনেই যেন দায়মুক্ত হলো পুলিশ প্রশাসন।

তবে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার বিষয়টি জানতে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আব্দুল আজিজের কাছে নিহতের স্বজনদের ফোন নাম্বার বারবার চেয়েও পাওয়া যায়নি। কখনো ডিউটিতে বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছেন আবার কখনো ফোন ধরেননি এই কর্মকর্তা।

নিহত মালেকা নওগাঁর আত্রাই থানার গগনডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি আশুলিয়ার মধ্য গাজীরচট এলাকার নজিম উদ্দিনের বাড়িতে ছেলের পরিবারের সাথে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ১৪ অক্টোবর (শনিবার) রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে সাভারের আশুলিয়ায় বাইপাইল এলাকায় জাহিদুলের মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁয় বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে রেস্তোরাঁর ভেতরে রান্না ঘরের সর্বত্র আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ভেতরে কাজ করছিলেন মধ্য বয়সী নারী মালেকা বেগম ও বাবুর্চি বাবু। বাবু দৌড়ে বের হতে পারলেও মালেকার পুরো শরীরে আগুন ধরে যায়। বাঁচার আত্মচিৎকারে তখন ভারী হয়ে ওঠে চারদিক। সম্মুখ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মালেকা। ওই সময়ই কক্ষে নেয়া বৈদ্যুতিক তারে আগুন লেগে তা খসে পড়ে মালেকার শরীরে।

আর এভাবেই কেউ এগিয়ে আসার পূর্বেই দরিদ্র মালেকার কষ্টে ভরা জীবনের ইতিবৃত্ত ঘটে। ফায়ার সার্ভিস এসে রেস্তোরাঁর ভেতরে মেঝেতে উপর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তার অঙ্গার শ্বাসহীন দেহ। এমনটিই জানিয়েছিলেন ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের জেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ।

মৃত্যুর কারণ জানতে যোগাযোগ করা হয় রেস্তোরাঁ মালিক জাহিদুলের সাথে। অনেক চেষ্টার পর দেখা মেলে তার। তবে তার সোজাসাপ্টা কথা এব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ঘটনা মানুষের মুখে শুনেছেন। এমনকি ঘটনার সময় থেকে পরবর্তী সময়ে ১২ ঘণ্টা পার হলেও তার রেস্তোরাঁর নিহত কর্মচারীর পরিচয়ও তার জানা নেই বলে জানান। কোথায় থেকে তার দোকানে নিম্নমানের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের নামও নাকি তার অজানা! তাহলে কীভাবে তিনি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে নিজের দুইটি লাভজনক রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছেন এমন প্রশ্নে শেষমেষ হতচকিত হয়ে যান বেচারা। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কত টাকা দিয়েছেন সেই বিষয়টিও গোপন রাখেন তিনি।

পরদিন রবিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আব্দুল আজিজের কাছে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার উপস্থিতিতেই নিহতের পরিবার ও রেস্তোরাঁ মালিকের ‘মিটমাট’ বা সমঝোতা হয়ে গেছে। নিহতের দুই ছেলে মালেকার লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।

কিন্তু কীভাবে মিটমাট করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। তাই উভয় পক্ষের সম্মতিতেই সবকিছু হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

এছাড়া থানা প্রাঙ্গণে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পরও কীভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হলো এব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

আর যে নিম্নমানের সিলিন্ডারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মালেকার মৃত্যু হয়েছে সিলিন্ডার সরবরাহকারী সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না সে বিষয়েও অভিযোগ পেলে অথবা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/আইআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :