‘অপমানিত হয়েছি, কিন্তু মমতাকে অবজ্ঞা করতে পারিনি’

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে ‘অপমানিত’ হয়েছেন তিনি। কিন্তু মমতা এমন মানুষ, যাকে ‘অবজ্ঞা করা সম্ভব নয়’বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। সেই আত্মজীবনীতেই তিনি জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের এক বৈঠক ছেড়ে কীভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কীভাবে মমতা চক্রান্তের অভিযোগও তুলেছিলেন তার বিরুদ্ধে। তবে সপ্রশংস কলমে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মূল্যায়ন, মমতা আজ যেখানে পৌঁছেছেন, তা সম্পূর্ণ তার নিজেরই কৃতিত্ব।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নিজের লেখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জন্ম বিদ্রোহী’ আখ্যা দিয়েছেন। নিজের রাজনৈতিক জীবনকে নির্ভীক এবং লড়াকু মনোভাব নিয়ে গড়ে তুলেছেন মমতা। লিখেছেন প্রণব মুখার্জি।

সেই প্রসঙ্গেই প্রণব মুখার্জির মন্তব্য, মমতার রাজনৈতিক সাফল্য ‘তার নিজের লড়াইয়ের ফল’।

১৯৯২ সাল। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ ডামাডোল চরমে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন? সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে হবেন? নাকি সর্বসম্মতভাবে হবেন? এ নিয়ে তখন জোর টানাপড়েন প্রদেশ কংগ্রেসে। প্রণব মুখার্জিকে মধ্যস্থতা করতে বলেছিলেন বিজিপি নেতা পি ভি নরসিংহ রাও।

তেমনই এক মধ্যস্থতার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেসব পর্যবেক্ষণ ছিল, তা নিয়ে আলোচনার জন্য আমি সে বছর শীতকালে তাকে একটা বৈঠকে ডাকলাম। বৈঠক চলাকালীন হঠাৎ তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং বললেন, আমি এবং অন্য নেতারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছি। তারপর তিনি সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুললেন এবং বললেন, তিনি সব সময়ই নির্বাচনের পক্ষে যাতে তৃণমূলস্তরের কর্মীরাও নিজেদের মতামত জানাতে পারেন।’

‘প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং অন্য কয়েকজন নেতা নিজেদের পছন্দের লোকেদের মধ্যে দলীয় পদগুলি বিতরণ করতে চান বলেই সাংগঠনিক নির্বাচন ভেস্তে দিতে চাইছেন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই অভিযোগ করেছিলেন। লিখেছেন প্রণব মুখার্জি। মমতার ‘ভয়ংকর সব অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া দেখে স্তম্ভিত’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

সাংগঠনিক নির্বাচন না করে সমঝোতার মাধ্যমে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং অন্যান্য পদাধিকারী নির্বাচনের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে, মমতা সেই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং অসম্মানিত ও অপমানিত বোধ করেছিলাম।’কিন্তু মমতা সম্পর্কে প্রণব মুখার্জির স্নেহসিক্ত মূল্যায়ন, মমতার আচরণের ‘ব্যাখ্যা করা কঠিন, কিন্তু তাকে অবজ্ঞা করা কঠিন’।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/এসআই)