পথের নবজাতকের আশ্রয় হলো ইউপি সদস্যের ঘরে

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩৪

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নিষ্পাপ চেহারার ফুটফুটে ছেলে শিশুটি। ক্যামেরার ফ্লাশের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল তার। নড়েচড়ে উঠল শরীর, তবে চোখ খুলল না। কান্না করতে চাইলেও শান্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে। জন্মের পরপরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ওই নবজাতক কে (ছেলে শিশু) ফেলে পালিয়েছেন এক মা। হয়তো এখনোই সে বুঝে ফেলেছে তার পরিণতির কথা। যে কারণে নতুন মায়ের বুকে ঠাঁই পাওয়ায় কান্নাকাটি করছে না। সুবোধ শিশুর মতোই শান্ত সে।

ঘটনাটি মঙ্গলবার সকালের। এ ঘটনায় উপজেলা সদরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। বুধবার সকালে শিশুটিকে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার হান্নান মিয়ার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

শিশুটিকে ফেলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমে ওই বাড়িতে। সকলের মুখে একটি কথা, ‘ফুটফুটে এ শিশুটিকে কীভাবে ফেলে রেখে পালিয়ে গেল নিষ্ঠুর মা’।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালের দিকে এক নারী নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে আখাউড়া সদর দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের আনোয়ারের বাড়িতে যান। এসময় তার বাসায় তিনি একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য বাড়ির মালিককে অনুরোধ জানান। কিছুক্ষণ পর ওই নারী খাবার খেতে চান। এসময় আনোয়ার মিয়ার স্ত্রী রেখা বেগমের কোলে শিশুটিকে তুলে দিয়ে মহিলাটি খাবার শেষ করে বলেন, ‘আমার খালাত ভাই কিছু টাকা দেবেন আমি টাকাগুলো নিয়ে আসছি। এরপর থেকে সে আর ফেরিনি।

নুরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আনোয়ার মিয়ার স্ত্রী রেখা বেগম জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অপরিচিত ওই নারী নবজাতক ছেলেশিশুকে নিয়ে তার বাড়িতে যান। তিনি ধারণা করছেন, শিশুটি জন্মের ২-৩ ঘণ্টা পর তার বাড়িতে আনা হয়। তখনও বাচ্চাটির শরীর ও কাপড়ে ছোপছোপ তাজা রক্ত মাখানো ছিল। জন্মের পর কাটা নাভি বাধাসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো তখনও করা হয়নি। পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারকে জানানো হয়।

আখাউড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফারুক ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে আরও বেশ কজন ছেলে বাচ্চাটিকে নেয়ার জন্য চাইছেন। কিন্তু ওয়ার্ড মেম্বার হান্নান মিয়া নিজেই শিশুটি লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে চাওয়ায় তার কাছেই শিশুটিকে আইনগত ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

ওয়ার্ড মেম্বার হান্নান মিয়া জানান, আমার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার একটি পুত্র সন্তানের আশা আল্লাহ পূরণ করেছেন। এখন তিনিই শিশুটির বাবা। অনুষ্ঠান করে শিশুটির নাম রাখবেন।

তিনি জানান, তাকে মানুষের মতো মানুষ করে বড় করবেন। যে কারণে তিনি শিশুটির সকল দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে গুঁড়ো দুধ পান করাচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)