জেগেছে পদ্মা সেতু-৩

সড়কে-রেলে বদলে যাওয়ার আবাহনী দক্ষিণাঞ্চলে

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৭ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:৪৩

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

সদ্যই বসেছে প্রথম স্প্যান। উত্তাল পদ্মার বুকে এখন সেতু অনেকটাই দৃশ্যমান। এর বাকি কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতেই। যা দেখে এসেছে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম টিম। মাওয়া ও জাজিরা ঘুরে এসে লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ছবি তুলেছেন শেখ সাইফ

বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে অনেক আগেই। বাকি ছিল দক্ষিণের মানুষ। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু পদ্মায় সেতুর যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা বহুকাল ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এখন পদ্মায় সেতু দৃশ্যমান। অপেক্ষা কাজ শেষের। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের ছবি বদলে যাবে। সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণের মানুষের মধ্যে অন্যরকম কর্মচঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। শিল্পায়নের পরিকল্পনাও হচ্ছে বহু আগে থেকে। অনেকে পরিকল্পনা করে রেখে দিয়েছেন। অপেক্ষায় আছে সেতু বাস্তবায়নের। সেতুর কাজ শেষ হলে শুরু হবে শিল্প-কারখানা স্থাপনের মহোৎসব। দক্ষিণের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। দেশের জিডিপিতেও এটি ভূমিকা রাখবে। প্রবৃদ্ধি এক দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে। কারণ এখনো দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তর জায়গা-জমি পড়ে আছে। যেখানে বড় ধরনের ভারী ও মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করলে পদ্মার ওপারে অনেক শিল্পায়ন হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এই সময়কে বলেন, ‘শিল্পের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন খুব জরুরি। যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে উঠলে শিল্পোন্নয়নের পথ সহজ হয়। পদ্মা সেতু এদেশের শিল্পের বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। তবে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেই হবে না। কম সময়ের মধ্যে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।’

দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া যাবে রেলপথে

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নড়াইল জেলা নতুন করে রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে। এ রুটে কন্টেইনার চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো স্পিড ও লোড বিধিনিষেধ না থাকায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফ্রেইড ও ব্রড গেজ কন্টেইনার চালু করা যাবে। রেলের যাত্রী সেবার মান বাড়বে এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও রেল সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করতে এই রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

এ প্রকল্প ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ গড়ে উঠবে। ঢাকা-যশোর করিডোরে অপারেশনাল সুবিধাসহ সংক্ষিপ্ত রুটে বিকল্প রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল লাইনটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া-মাওয়া গিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙা জংশন স্টেশন পর্যন্ত যুক্ত করবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙা জংশন-বিদ্যমান কাশিয়ানি জংশন স্টেশন-পদ্মবিলা জংশন হয়ে ওয়াই কানেকশনের মাধ্যমে রূপদিয়া এবং সিঙ্গিয়া স্টেশনে গিয়ে মিলবে। ঢাকা-গেন্ডারিয়া সেকশনে তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে।

আগামীকাল চতুর্থ পর্ব: পদ্মা সেতু ঘিরে হবে হংকংয়ের আদলে নগর

ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/এইচএফ/টিএমএইচ