খালেদা ফেরায় উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪৭ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫২

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

অনেক দিন পর রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করল বিএনপি। অন্যান্য সময় দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতির বেড়াজালে আটকে পড়লেও বুধবার দলীয় প্রধানের দেশে ফেরা নিয়ে কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালন করেছে দলটি। বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে রাজনীতির মাঠে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়েছে তারা। আর তাতে দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশা করছেন, আগামী দিনে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে প্রশাসন বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার‌্যক্রম পালনের সুযোগ করে দেবে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশের বাইরে সফরের ক্ষেত্রে এবারই সবচেয়ে বেশি সময় বিদেশে অবস্থান করেন চেয়ারপারসন। তিন মাসের বেশি সময় পর তিনি বিদেশ থেকে ফেরায় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা আবেগ কাজ করছিল। অন্যদিকে একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় শঙ্কার পাশাপাশি ক্ষোভও কাজ করেছে। ফলে বুধবার বিকালে খালেদাপ জিয়ার অভ্যর্থনায় ব্যাপক জনসমাগম হয়।

আগামী দিনে এই উদ্দীপনা কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে জোরালো করতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা।

চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা নিতে গত ১৫ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ করেন তিনি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় দেশের আদালতে।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তিন মাস পর লন্ডন থেকে বুধবার দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসনর। সেদিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন তিনি।

তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। অনেকদিন পর রাজধানীতে নির্বিঘ্নে এমন কর্মসূচি পালন করতে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল ।

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজধানীতে বড় পরিসরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। তবে সেই অর্থে বুধবারের কর্মসূচির মতো নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে করতে পারেনি দলটি।  

বুধবারের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, ‘পুলিশের দানবীয় চরিত্রের সামান্য পরিবর্তনেই যেন দেশনেত্রীর আগমনে প্রিয় রাজপথ পরিণত হলো জনসমুদ্রে।’

কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল তার ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির ছবি জুড়ে দিয়ে লিখেন, ‘স্মরণকালের ঐতিহাসিক শো ডাউন। জনতার মহাসমুদ্র। যারা সব সময় বলে থাকেন বিএনপি থাকবে না, বিএনপি টিকবে না, বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে, তারা একবার এয়ারপোর্ট রোডের দিকে চোখ রাখুন দয়া করে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক বিমানবন্দর সড়কজুড়ে নেতাকর্মীদের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শোডাউন।’

খালেদা জিয়া দেশে ফেরায় বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত বলে দাবি করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বুধবারের কর্মসূচিতে পুলিশের অবস্থানের সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘গত নয় বছরের মধ্যে বুধবারই দেখা গেছে পুলিশ আইনের প্রতি অনেকটা শ্রদ্ধাশীল ছিল। যদিও পুলিশের প্রতি সরকারের নির্দেশের কারণে অনেক শীর্ষ নেতাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বলব সমসাময়িক সময়ের মধ্যে পুলিশ বুধবার ভালো আচরণ করেছে।

তিনি অবশ্য অভিযোগ করে বলেছেন, চেয়ারপারসন বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার সময় ওই এলাকার সড়কের বাতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাতি বন্ধ করে সরকার হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছে।

সরকার ও প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে দুদু বলেন, দেশ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। সামনে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবে। তাই আশা করি প্রশাসন, সরকার সবাই একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য কাজ করবে। বিএনপি সহযোগিতা করবে।

শহিদুল ইসলাম বাবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বেগম খালেদ জিয়া আমাদের কাছে উদ্দীপনার উৎস ও অনুপ্রেরণার নাম। তিনি চেকআপ শেষ করে দেশে ফিরেছেন। এত দিন তিনি কখনো বিদেশে ছিলেন না। যে কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে বাড়তি আবেগ কাজ করেছে। অন্যদিকে একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় তিনি দেশে এসেছেন। সবাই ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তাকে স্বাগত জানাতে এসেছেন। আমরা আশা করি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক ভাবধারার সৃষ্টি হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে। অন্যথায় একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ হবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন বাধা দিয়েছে। তবে অন্য সময়ের মতো না। কিন্তু জনস্রোতের মুখে কোনো বাধা আাসলে টিকে না।বুধবার তা প্রমাণ হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/বিইউ)