দিন শেষে ভালো কাজটাই টিকে থাকবে: জ্যোতিকা জ্যোতি

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫৩ | প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৩৫

জ্যোতিকা জ্যোতি- এক যুগেরও আগে লাক্স-আনন্দধারা ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় সেরা দশে স্থান করে প্রথম পরিচিতি পান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিজ্ঞাপনচিত্র, টিভি নাটক, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিনোদনজগতে বড় একটা জায়গা করে নেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেও সুনাম কুড়িয়েছেন। ‘আয়না’ থেকে ‘অনিল বাগচীর একদিন’Ñ তার বড়পর্দার উপস্থিতি এ ধরনের বহুল প্রশংসিত চলচ্চিত্রে। সব অঙ্গনেই কাজ করেছেন দেশের খ্যাতিমান নির্মাতাদের সঙ্গে। অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতির মুখোমুখি হয়েছে এই সময়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ

এক দশক হলো কাজ করছেন। এই অভিজ্ঞতা কেমন?

আমি আসলে ওইভাবে হিসাবই করিনি। আমার কাছে মনে হয় আমি এখনো কাজ শুরুই করিনি। আমি অভিনয়ে নিয়মিত হই ২০০৬ সাল থেকে। এর দু বছর আগেই তো লাক্স ফটোজেনিক হয়েছিলাম। অবশ্য লাক্স ফটোজেনিক হওয়ার আগেই আমি সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। ২০০৬ সালে এসেই নিয়মিত কাজ শুরু করি। এক দশক হলেও মনে হচ্ছে এখনো নতুন করে শিখছি।

এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?

‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ নামে আমি কলকাতার একটি সিনেমায় কাজ করছি। কালীপূজার পর শুটিং শুরু হওয়ার কথা। আমি সেখানে ‘রাজলক্ষ্মী’ চরিত্রে অভিনয় করছি। ছবিটি পরিচালনা করছেন কলকাতার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। ওটার জন্যই অপেক্ষা করছি। বাংলাদেশেও একটা ছবি ফাইনাল হয়েছে, জানুয়ারি থেকে শুটিং। তবে সিনেমার নাম এখনো ঠিক হয়নি। ওটা একটা অনুদানের ছবি। এই দুটি ছবি নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি আর নাটক তো করছিই। তাছাড়া অনেকদিন কলকাতায় ছিলাম, তাই মাঝখানে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র করেছি। চার- পাঁচটা সিঙ্গেল নাটক করেছি।

শিক্ষাজীবন থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন থেকেই পেশাদার হওয়ার লক্ষ্য ছিল?

আমার নিজের কিছু শেখা দরকার। সেটা অভিনয় করব বলে থিয়েটার করব এমনটা নয়। নিজেকে তৈরি করার জন্যই মূলত থিয়েটার করা। তখন আমি আবৃত্তিও করতাম। গান শিখতে চেয়েছিলাম, সেটা শেখা হয়নি। কারণ ফ্যামিলির সাপোর্ট ছিল না। আমার মনে হয়েছিল আমার উচ্চারণ ঠিক নেই। উচ্চারণ শেখা দরকার, কথা বলা শেখা দরকার। সে জন্যই কিন্তু আমি থিয়েটার এবং আবৃত্তি করেছি। অভিনয়ই করব এ ধরনের কোনো বিষয় থেকে কিন্তু থিয়েটার শুরু করিনি।

থিয়েটারে কী নিয়মিত ছিলেন?

থিয়েটার শুরু করেছিলাম একটি শিল্প চর্চার সঙ্গে থাকার জন্য। আমি যতদিন সেটা করেছি একেবারে মন থেকেই করেছি। ২০০৪ সালে আমার ছবি জমা দিলাম লাক্স ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায়। সেবার আমি লাক্স ফটোজেনিক হলাম। টিভি এবং সিনেমায় নিয়মিত হওয়ার ফলে আমার আর থিয়েটার করা হলো না। তখন পড়াশোনা করি, অভিনয়ও করি। তাই থিয়েটার আর কন্টিনিউ করতে পারিনি।

অভিনয়ই করবেন, অন্য কিছু করবেন না- এই সিদ্ধান্তে কখন এলেন?

যখন থিয়েটারে ক্লাস করতাম তখন টিচাররা বলতেন, এখান থেকেই তোমরা কেউ হয়তো অনেক বড় জায়গায় যাবে। সেটা অন্যরা কি ভাবত আমি জানি না। আমি মনে করতাম এটা তো হতেই পারে। আমার বিশ্বাস ছিল। তখন থেকে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের স্পিরিট কাজ করত। আর শুরু করার জন্য যেটা প্রয়োজন ছিল একটি প্লাটফর্ম, লাক্স ফটোজেনিক সেই প্লাটফর্ম হিসেবে কাজে লাগল। কিন্তু তার আগেই আমি কবরী আপার ‘আয়না’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেলাম। তখন আমার বিশ্বাস অনেকটাই সত্যিই হলো।

পেশা বিবেচনায় নিলে অভিজ্ঞতা কেমন?

আমি কিন্তু পেশা হিসেবে অভিনয় শুরু করি। কোনো চাকরি বা অন্য কিছু করার চেষ্টা করিনি। একটা সময় আমি অভিনয় ছাড়া আর কিছু করতেই চাইনি। স্কোপ ছিল। এখানে বহু মানুষ কাজ করছে। আমিও একেবারে জিরো থেকে শুরু করেছি। আমি অভিনয় করে প্রথম ইনকাম করেছি। প্রচুর শুটিং করতাম। মাসে ৩০ দিনও কাজ করেছি। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

কোন ধরনের পরিবর্তন?

এই সময়ে এসে আমি যদি অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নিতাম, সেটা পারতাম কি না জানি না। কারণ আমি তো একা একা স্ট্রাগল করে এসেছি। কারো কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট পেয়ে আমি অভিনয় করিনি। তবে তখন মনে হয়েছে এটা আমি পারব। এখন হলে এই পারব বলার যে সাহস তা থাকত কি না আমি জানি না।

এক যুগের অভিজ্ঞতায় এখনকার সময়কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড চলছে। কাজের কোয়ালিটি ফল করেছে। সব ইউনিটে কাজ করতেও আমার ভালো লাগে না। এমনও হতে পারে এতদিনে আমি কিছু শিখেছি। হয়তো সে কারণেই আমার কাছে মনে হয় এটা হওয়া উচিত। এটা উচিত নয়। এটা কিছু হচ্ছে না। সে জন্য এখন সব কাজ করি না। তবে এই অবস্থা সাময়িক। দিনের শেষে কাজের মানুষরাই টিকে থাকবে।

চলচ্চিত্রে নিজের কাজ কিভাবে বিচার করবেন?

এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। আমি আমার কাজ নিয়ে এখনো খুব খুশি হতে পারিনি। আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মতো কাজ করতে পারিনি। কারণ সব ধরনের কাজ আমি করতে চাই বা চিন্তা করি, সে ধরনের কাজ আমি এখনো শুরুই করতে পারিনি। তবে যখন দেখি প্রতিটি ফেস্টিভ্যালেই আমার দু-তিনটি সিনেমা যাচ্ছে এটা দেখতে ভালো লাগে। তবে নিজের কাজ নিয়ে এখনো আমি খুশি হতে পারিনি।

কোনো নির্মাতাকে মিস করেন?

আমি যদি সালাহউদ্দিন লাভলু ভাইয়ের কথা বলি। কোনো কাজই নিজের বাজেটের এক পয়সা কমেও করবেন না। দরকার হলে কাজটি তিনি করবেনই না। তাও নিজের যে রিকয়ারমেন্ট সেখানে ছাড় দেবেন না। নুরুল আলম আতিক ভাইও কোনো কমপ্রোমাইজ করেন না। তাই বাজারে এরা খুব বেশি কাজ করছেন না। এখন ডমিনেট করছে চ্যানেল এজেন্সি। এই পরিস্থিতিটা নির্মাতাদের জন্য কষ্টের।

এই সুযোগে অন্যরা তো ঠিকই কাজ করছেন।

এখন বিষয়টা হয়ে গেছে এমন- কোনো সেক্টরেই যেই মানুষ সফলতা পাচ্ছে না সেই মানুষই চলে আসছে মিডিয়ায়। এ রকম লোকজন যখন আসবে, যাদের শিল্প সাহিত্য সম্পর্কে নলেজ নেই, পড়াশোনা নেই, তারা ঢুকে বিষয়গুলোকে আরও খারাপ করে দিয়েছে। তারা ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে কাজ পেয়ে যাচ্ছে। এ জন্যই ক্ষতিটা হয়ে গেছে। তারা জায়গাটা নষ্ট করে ফেলছে, হয়তো জায়গা দখল করে ফেলছে। আসলে তাদের তো জায়গা হচ্ছে না। তারা ভালো কাজ দিতে পারছে না।

অনেক অভিনেতা রাজনীতিকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যান, সেখানে আপনি সক্রিয়, রাজনৈতিক সচেতনÑ কারণ কী?

এটা আসলে ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। আমি একটা কাজ করতে গেলাম যেটা আমি শতভাগ, ৮০ ভাগ বা ৫০ ভাগ জানি। কিন্তু বাকি যারা আছে তারা হয়তো ৫০ ভাগও জানে না। হয়তো কিছুই জানে না। তখন সমস্যা হয়। কারণ সবাই এক রকম আর আমি এক রকম। মানে আমি আলাদা হয়ে গেলাম। আমি সচেতন এটা আমার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। এখানে সচেতন হলেই মুশকিল। যে যত ডাম্প থাকবে তার সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এই দেশের প্রেক্ষাপটে আমার রাজনৈতিক সচেতনতা নেগেটিভ।

তারপরও তো জ্যোতিকে মানুষ প্রতিবাদের মঞ্চে দেখতে পায়।

আমি এরকমই। আমি যেটা শিখে এসেছি বা যা জানি তা কমপ্রোমাইজ করি না। আমি এভাবেই বড় হয়েছি। ঘর থেকে এমন শিক্ষা পাইনি যে, কমপ্রোমাইজ করব। আমি প্রতিবাদ করবই। আমিতো এই রকমই।

সবশেষে আবার অভিনয়ে ফিরি। অভিনয় আপনার কাছে আসলে কী?

অভিনয় অনেক কঠিন জিনিস। আমি এটা ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার কাছে মনে হয় বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে দেখার একটা ব্যাপার আছে, আমি এটা উপভোগ করি। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষ হয়ে যাই। মানুষ থেকে মানুষে রূপান্তর হয়ে যাওয়াটা বা অন্য মানুষ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ হওয়ার একটা খেলা। আমি এটা করতেই পছন্দ। আমি অভিনয়কে এভাবেই দেখি।

ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।

আপনাকে এবং সাপ্তাহিক এই সময় পরিবারের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :