‘পাহাড়ে তুলা উৎপাদনে হারানো গৌরব আনতে হবে’

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:০৭ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৫

রাঙামাটি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

‘এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম তুলা উৎপাদনে বিখ্যাত ছিল। রাঙামাটির আদি নাম ছিল কার্পাসমহল। কার্পাস অর্থ তুলা। বৃটিশ শাসনামলে খাজনা হিসেবে বৃটিশ সরকারকে তুলা দিতেন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজারা। পাহাড়ে তুলা উৎপাদনের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। পাহাড়ের তুলা উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় বর্তমান সরকার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।’

কথাগুলো বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

শুক্রবার সকালে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নে শুকরছড়ির কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে  জেলার বিভিন্ন উপজেলার তুলা চাষিদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

এর আগে তিনি শুকরছড়ির পাহাড়ে আবাদ করা তুলার প্লট পরিদর্শন করেন।

সচিব বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। এই পোশাক তৈরির জন্য বিদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দিয়ে তুলা আমদানি করতে হয়। এতে বুঝা যায়, আমাদের দেশে তুলার চাহিদা ব্যাপক। এটি উৎপাদন করলে কোন ক্ষতি নেই। তুলা সংরক্ষণ সহজ হওয়ায় যেকোন সময় এটি বিক্রি করা যায়। বেশি পরিমাণ তুলা চাষ করে দেশের কোটি কোটি টাকা রক্ষা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে হবে পার্বত্যবাসীকে।

তিনি বলেন, তুলা চাষ পরিবেশবান্ধব। তুলা চাষ তামাক চাষের চেয়ে বেশি লাভজনক। তামাক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষ, পরিবেশবিরোধী সেগুন, রাবার বাগান করা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।

সচিব আরো বলেন, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন হওয়ার পর থেকে এ মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চুক্তি মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হস্তান্তর করা হয়েছে।

পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুদত্ত চাকমা বলেন, তুলার সাথে সাথী ফসল হিসেবে ধান, হলুদসহ অনেক ফসল উৎপাদন করা যায়। তাই শুধু তুলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সাথী তুলার সাথে সাথী ফসল উৎপাদন করে দুদিকে লাভবান হওয়া যাবে।

তুলাচাষি  সুশান্ত চাকমা বলেন, তিনি গত বছর কাউখালীতে মাত্র ২০ শতক জমিতে তুলা চাষ করে ছয় মাসের মধ্যে সাত মণ তুলা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার টাকা।  এবছর ৪০ শতক জমিতে তিনি তুলার চাষ করেছেন। বীজ এবং সার তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে পেয়েছেন জানান সুশান্ত। 

নানিয়াচর থেকে আসা তুলাচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, তুলা চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি এবছর চার বিঘা তুলার চাষ করেছেন।

মতবিনিময় সভায় সচিব বলেন, জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত অনেকগুলো বিভাগের মধ্যে কৃষি বিভাগ একটি। এ বিভাগ তিন পার্বত্য জেলায় কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড পাহাড়ে তুলাচাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ে পরিবেশবিরোধী তামাকের পরিবর্তে তুলা চাষ করতে হবে। কারণ তুলা চাষ যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি তামাকের চেয়ে লাভজনক।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য থোয়াইচিং মং মারমার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন, জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদ, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামান, রাঙামাটি উপ-পরিচালক পরেশ চন্দ্র চাকমা।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)