আইসিটি এক্সপোর পর্দা নামলো

বিআইসিসি থেকে, আসাদুজ্জামান
 | প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৩

শেষ হলো তিন দিনের তথ্যপ্রযুক্তির জমজমাট আসর। দেশের হার্ডওয়্যার শিল্পকে রপ্তানিমুখী করার জন্য ১৮ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয় বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৭। মেক ইন বাংলাদেশ স্লোগানে এই প্রদর্শনীতে দেশ-বিদেশের প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) এর যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

যেসব অধুনা প্রযুক্তি ও ধারণা তথ্যপ্রযুক্তির প্রকৃতি ও ব্যবহার অবিশ্বাস্য গতিতে বদলে দিচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে, আমাদের সক্ষমতা ও উদ্ভাবন উপস্থাপন করা হয় এবারের প্রদর্শনীতে। বিশেষ করে হার্ডওয়ার, ম্যানুফ্যাকচারিং ও গবেষণা খাতের সম্ভাবনা, কর্মপ্রচেষ্টা ও রূপকল্প তুলে ধরা হয় এবারের এক্সপোতে।

উপস্থাপন করা হয় হাইটেক পার্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তির উৎপাদন অবকাঠামোর অগ্রগতিও। জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্র্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে প্রদর্শনী সফল হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।

উত্তরা থেকে প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন তরুণ আইনজীবী তাহমিনা আফরোজ। তিনি বলেন, একজন আইনজীবীকে সবসময় সব বিষয়ে সমৃদ্ধ হতে হয়। বিশেষ করে প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যায় না। তাই প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেখে শেখার জন্যই আসি। আইনের প্রকৃতি অনেকটাই বদলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেকেই অপরাধ করছেন। তাই অপরাধের ধরণ বুঝতে প্রযুক্তির সঙ্গে আপডেট থাকার গুরুত্ব অনুভব করি।

১৮ অক্টোবর বুধবার বেলা ১১ টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুসত্মাফা কামাল। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি ও সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ এমপি প্রমুখ।

এবারের মেলায় আটটি দেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী, প্রতিনিধি, স্পিকার অংশ নিয়েছিলেন। তারা বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটুবিতে অংশ নেন।

মেলায় গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিল সুপরিচিত প্রযুক্তি ব্র্যান্ড এইচপি, টিপিলিংক, সিলভার স্পন্সর হিসেবে অংশগ্রহণ করে ডাহুয়া টেকনোলজি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রায় ৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সব পণ্য, সেবা, জীবনশৈলী ও ধারণা উপস্থাপন করে প্রতিষ্ঠান। ১৩২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে তা প্রদর্শন করা হয়।

প্রদর্শনীতে ছিল লোকাল ম্যানুফ্যাকচারাস ফোরাম, গেমিং, সেলফি, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিট দ্যা লিডারস, লাইভ ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে প্রবেশ, ডিজিটাল সেবা ইত্যাদি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রদর্শনী উপলক্ষে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা দেয়া হয়। প্রদর্শনী চলাকালে মেলা প্রাঙ্গণে ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কয়েকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

মেলার আহ্বায়ক বিসিএসের মহাসচিব ইঞ্জি. সুব্রত সরকার বলেন, হার্ডওয়্যার খাতে বাংলাদেশের এ সকল সাফল্য ও অগ্রগতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে এবং এ খাতে আরও এগিয়ে যেতেই আমরা ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৭’ আয়োজন করছি। পুরো প্রদর্শনীকে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারাস, আইওটি ও ক্লাউড, প্রোডাক্ট শোকেস, ইনোভেশন, মিট উইথ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারারস, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, মেগা সেলস, সেমিনার, বিটুবি ম্যাচমেকিং ও হাইটেক পার্ক- এ রকম ১০টি জোনে ভাগ করা হয়।

এবারের আইসিটি এক্সপো ২০১৭ এর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি করে তোলা। বাংলাদেশে আইসিটি খাতে ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরিতে আমরা মেলার মাধ্যমে উত্সাহ দিয়ে যাচ্ছি। নতুন যাঁরা উদ্ভাবক ও স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছে তারা যেন বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা হিসেবে ইন্ড্রাস্টি ও তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে আয়োজন করা হয়েছিল এবারের মেলা তার সবগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

শেষ দিনের যত আয়োজন

শিশুদের রঙ তুলিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া

মেলার শেষ দিন সকালে শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন ক রা হয়। এতে প্র্রায় একশ শিশু অংশ নেয়। বয়স ভিত্তিক দুইটি গ্রুপে চলে প্রতিযোগিতা। ক গ্রুপে অংশগ্রহণকারী শিশুরা এঁকেছে প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ। খ গ্রুপের শিশুরা এঁকেছে ডিজিটাল লাইফস্টাইল নিয়ে।

সকাল সাড়ে দশটায় এটি শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর বারোটায়। আয়োজকরা জানান, দুইটি গ্রুপ থেকে তিনজন করে বিজয়ী করা হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। দুপুরের পর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে এক শিশু। বাইরে তার স্বপ্নের কারখানা চলছে। চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরা সব ফুটেজ ধারণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব দেখভালের জন্য আছে কন্ট্রোল সেন্টার। মহাআনন্দের তার নিজের তৈরি কর্মযজ্ঞ দেখছে সে। গলায় ঝুলানো ক্যামেরায় দিয়ে সেসব ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাদা ক্যানভাসে রঙ তুলির প্রলেপ ডিজিটাল বাংলাদেশের এমনই ছবি এঁকেছে প্রাঙ্গন সরকার। সে রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে রণনের ক্যানভাসে ফুটে উঠছে অত্যাধুনিক ড্রোনের ছবি। এই ড্রোন নিত্যদিনের অনেক কাজই করিয়ে নেয়া যাবে। রণণের বাবা আবু বকর সিদ্দীকি বলেন, রণনের প্রযুক্তির পণ্যের প্রতি বেজায় ঝোঁক। সে অবসর সময়ে খেলনা বিমান, ড্রোন নিয়ে খেলে। বড় হয়ে সে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। শহরতলী নায়ারণগঞ্জ থেকে ছোট্ট শিশু গাজী ইমাম হোসেনকে নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন রোকসানা হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখানকার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজ ওকে নিয়ে এখানে এসেছি। আমি চাই আমার সন্তানরা প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠুক।’ বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোর আহ্বায়ক বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির মহাসচিব

সেমিনার

প্রদর্শনীর শেষ দিন দুপুর তিনটায় উইন্ডি টাউনে ‘ইন্সপায়রেশন অ্যান্ডে র‌্যাপ অব আই টু আই প্রজেক্ট’। এতে দেশ-বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

সন্ধ্যা ছয়টায় ‘সেমিনার বাই ডেল’শীর্ষ এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্রদর্শনী রাত আটটায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এক ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়েছে। রাত নয়টায় শেষ হয় তথ্যপ্রযুক্তির এই আসর।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/এজেড/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :