না.গঞ্জ-৩: জাপার খোকার পক্ষে সব দলের জনপ্রতিনিধিরা
আগামী সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে মনোনয়নের জন্য প্রায় সব দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা ফোরাম করে অবস্থান নিয়েছেন বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির (জাপা) লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে। আর তা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা চান না গতবারের মতো মহাজোটের দোহাই দিয়ে এবারও আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিতে। এবার তারা নৌকা নিযে নিজ দলের প্রার্থী দিতে চান। ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনসংযোগে বিএনপির বদলে জাপার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
দেশের আরেক প্রধান দল বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কিছুদিন আগেও জনসংযোগে বেশ তৎপর ছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে সোনারগাঁও থানায় কেন্দ্রীয় বিএনপির দুজন নেতাসহ ১০০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হওয়ার পর তারা আপাতত মাঠে নেই।
বিএনপির অনুপস্থিতিতে এখন আগাম নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে কেবল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিয়মিত জনগণের কাছে গিয়ে নিজেদের তুলে ধরছেন।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এইচ এম মাসুদ দুলাল ও অর্থনীতিবিদ আনোয়ারুল কবির ভুইয়া। এ ছাড়া এলাকায় ব্যানার-ফাস্টুনে প্রচারণায় রয়েছেন লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। তিনিও সামনের নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক জাপাকে আসনটি ছেড়ে দিলে মোশাররফ হোসেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা।
এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁওয়ের সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ছিল। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। গতবার দশম সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিলেও এবার আর তা করতে নারাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু তাতে কতটুকু সফল হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জাপার বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে মনোনয়নের দাবি তুলেছেন সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও মেম্বারদের সংগঠন জনপ্রতিনিধি ঐক্য ফোরাম।
আওয়ামী লীগ, জাপাসহ বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই ফোরাম ইতিমধ্যে দুটি সভা করে লিয়াকত হোসেন খোকাকে নির্বাচিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি তুলেছেন। তারা না নৌকা না লাঙ্গল চান। তারা খোকাকে নির্বাচনে দেখতে চান। তারা এমনকি জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের কাছে কোনো দাবি তোলেননি। তবে আওয়ামী লীগ কিংবা জাপা যে দলেরই হোক খোকার নির্বাচন করা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের বিরোধ-বিভক্তি আর কোন্দলের চেয়ে এখন বেশি বিব্রত খোকার পক্ষে গঠিত ফোরামে আওয়ামী লীগের নেতারা থাকায়। আরেকটা ক্ষেত্রে তারা একাট্টা- আগামী দিনে মহাজোট থাকুক না থাকুক, এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিতে হবে।
গতবার এমপি খোকা নির্বাচিত হওয়ার পর এ আসনের উদ্ধবগঞ্জ এলাকায় জাপা কার্যালয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও এরশাদের পালিত কন্যা অনন্যা হুসেইন মৌসুমী। তারপর থেকে তিনি এ এলাকা আর আসেননি। তিনি এবার জাপা থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
জাপা থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত গোলাম মহীহ।
অন্যদিকে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগে নেমেছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল।
গত নির্বাচনের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে গত ১০ অক্টোবর সোনারগাঁয়ের কাচপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় দলের ১০০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হওয়ার পর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণসংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রেপ্তার হওয়ার ভযে আত্মগোপনে চলে গেছেন নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এসে সরব হচ্ছেন বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কায়সার হাসনাতের কাছে প্রায় ৮২ হাজার ভোটে পরাজিত হন।
আগে থেকেই এ আসন এলাকায় নিয়মিত পদচারণ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালের। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আজিজুল হক আজিজ।
নির্বাচনে মনোনয়ন ঘিরে বিএনপির নেতাদের মধ্যেও রয়েছে বিরোধ-বিভক্তি। নিজ নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে তারা প্রচারণা চালান। দু-একজন ছাড়া আর কাউকে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা যায় না কখনো।
(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/মোআ)