জলে বিপর্যস্ত সাভারের জনজীবন, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০৫ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩৫

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, ঘড়-বাড়ি এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানেও উঠে পড়েছে পানি। পানির নিচে ডুবে থাকা খানাখন্দে জর্জরিত রাস্তা দিয়ে চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বসতবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। ফলে রান্না, গোসল ও খাবার পানি সংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন এসব এলাকার লক্ষাধিক পরিবার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সাভার পৌরসভাসহ ব্যাংক কলোনি, গেন্ডা, কাতলাপুর, উলাইল, রাজাশন, ইমান্দিপুর, শিমুলতলা, রেডিওকলোনি, রাজফুলবাড়িয়াসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০টি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ডেন্ডাবর, পলাশবাড়ী, জামগড়া, নরসিংহপুর, বাইপাইল, ভাদাইল, শ্রীপুর, জিরানী, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ প্রায় ত্রিশটি এলাকাতেও সৃষ্টি হয়েছে জলজট। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমড় পানিতে ডুবে আছে।

সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা আনজির আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাভার বাসস্ট্যান্ডের সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা ব্যাংক কলোনির সড়কগুলোর এই বেহাল দীর্ঘদিনের। তার ওপর আবার রাস্তায় ধীর গতিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।

একই এলাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনন্যা জানান, ‘এখানে বৃষ্টির পানি আর নালার পানির মধ্যে পার্থক্য বোঝার কোনো কায়দা নেই। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ দেখেও যেন চুপচাপ রয়েছেন। তাদের উচিত দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা।’

এমন অভিযোগ সাভারের গেন্ডা, কাতলাপুর, উলাইল, রাজাশন, ইমান্দিপুর, শিমুলতলা, রেডিওকলোনি ও রাজফুলবাড়িয়াবাসী পানিবন্দিদের।

এদিকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ যেন এখানকার মানুষদের পিছু ছাড়ছে না। কয়েক মাস আগেও বৃষ্টির কারণে জামগড়া, নরসিংহপুর, ভাদাইল, শ্রীপুর, জিরানীসহ প্রায় দশটি এলাকার লাখো মানুষ মাসব্যাপী পানিবন্দি অবস্থায় ছিল। গত দুই দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে এই অবস্থার আবারো পুনারবৃত্তি ঘটেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা ও বসতবাড়ি।

আশুলিয়ার উত্তর বাইপাইল এলাকার বাসিন্দা দুলাল মোল্লা জানান, এই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। কখনও সপ্তাহ আবার কখনও মাসব্যাপীও জলাবদ্ধতা থাকে। স্কুলের পোশাক ভিজে যাবে এ জন্য অনেক সময় ছেলে-মেয়েকে কোলে ও কাঁধে করে রাস্তা পারপার করাতে হয়।

একই এলাকার মরিয়ম নামে এক গার্মেন্ট কর্মী ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত দুই দিন যে কত কষ্টে আমাদের দিন পার হচ্ছে তা বলার কোনো ভাষা নেই। কাপড় ভিজিয়ে কোমর পানি ডুবে আমাদের গার্মেন্টে যেতে হয়। কাজ থেকে এসেও শান্তি নেই। ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় রান্না, গোসল ও খাবার পানি সংকটে তাদের অবস্থা নাজুক। এমনকি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এই সংকট যেন আরও চরমে উঠেছে। আর কারখানার কেমিকেল মিশ্রিত পানিতে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী-শিশুরা।

এই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক ওবায়দুর রহমান লিটন বলেন, ‘এই এলাকার একমাত্র খালটির পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে দিয়েছেন প্রভাবশালী আহাদ আলী ওরফে টাইগার। এলাকাবাসী অনেকবার তার কাছে অনুরোধ করেও তিনি বাঁধটি খুলে দেননি।’

জামগড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার জানান, বৃষ্টি হলে দিনের বেলা যেমন তেমন রাত হলে নামে বিপত্তি। পোকা মাকড়ের উপদ্রবে অন্ধকারে আতঙ্কে থাকতে হয়। জনপ্রতিনিধিদের অনেকবার জানিয়েও এর কোনো সমাধান হয়নি।

জলাবদ্ধতায় লাখো মানুষের দুর্ভোগের ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ রাসেল হাসান ঢাকাটাইমসকে জানান, সাভার এলাকায় জলাবদ্ধতার সমাধান তার একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীদের সচেতন থাকতে হবে। তবে লাখো মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিনি পৌর সভাসহ সকল ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংকট নিরসনে আলোচনা করবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/আইআই/ইএস)