আসলেই কি ছাত্রদের সঙ্গে একই হলে থাকতে চেয়েছিল ছাত্রীরা?

কাওসার শাকিল
| আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪৮ | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩০

ঘটনাটা ঘটেছে পাশের দেশ ভারতে, আর আমাদের এখানে গোটা কতক নিউজ পোর্টাল খবরটা প্রচার করলো এরকম একটা শিরোনাম দিয়ে ‘ছাত্রদের সঙ্গে একই হলে থাকতে আন্দোলনে ছাত্রীরা’ । অমন রগরগে শিরোনাম দেখেই আমাদের চোখ চকচক, জিভ লকলক করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে শেয়ার। অথচ ভেতরের খবরটুকু পড়ার দরকারও মনে করলেন না কেউই। আগে লাইক-শেয়ার কামাতে হবে তো, নাকি?

আসল ঘটনা হলো ভারতের সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের একটা কমন হোস্টেল ছিল যার একটা অংশে ছেলেরা থাকতো আর অপর অংশে মেয়েরা। একই হোস্টেল যেহেতু, ছাত্র-ছাত্রী সবার জন্য নিয়ম কানুন সব সমান। মানে ছেলে মেয়ে সবাই একই রকম নিয়ম মানতে বাধ্য ছিল। ছেলে বলে আলাদা সুবিধা পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না তাদের। মেয়ে বলে ছাত্রীদের ঘাড়েও শাসনের আলগা খড়গ নামানোর সুযোগ পেতেন না কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু কিছুদিন আগে ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ মেয়েদের জন্য আলাদা একটা হোস্টেল তৈরি করে। সেখানকার মেয়েদের জন্য আলাদা নিয়মকানুনও তৈরি করা হয়। যেমন বলা হয় রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া যাবে না। অথচ ছেলেদের জন্য এরকম কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই।

খুব স্বাভাবিক কারণেই এই বৈষম্য মেয়েরা মেনে নিতে পারেনি৷ ১৪ জন ছাত্রী সেখান থেকে বের হয়ে পুরোনো ছাত্রাবাসে ফিরে আসে ৷ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বহিষ্কার করলে লিঙ্গবৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলন দানা বাধে, ছাত্ররাও সে আন্দোলনে যোগ দেয় ৷

মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবরটায় ভীষণ আমোদ পেয়ে গেলো। আরে! ছাত্রদের সঙ্গে একই হলে থাকতে চায় ছাত্রীরা! এরমধ্যে কী রকম একটা উত্তেজনার গন্ধ যেন আছে, তাই না?

আমরা পাঠকও বেশ লুফে নিলাম খবরটা (নাকি ওই রগরগে শিরোনামটাই শুধু? কেননা খবর তো আমরা পড়েই দেখিনি), সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে বেশ আনন্দ উত্তেজনা (!) বিতরণ করে বেড়ালাম। অথচ মূল খবরটা না সংবাদমাধ্যম দিলো, না আমরা জানতে চাইলাম।

আমরা যারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করি, সে সামনে থেকেই হোক বা পেছন থেকে, একটা কথা বারবার ভুলে যাই। পাঠক যা পড়তে চায় তা পড়ানোটাই কিন্তু আমাদের কাজ না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়ায় পাঠকের রুচি বদলানো। পাঠক যে জিনিস পড়ে না বা পড়তে চায় না অথচ তার জন্য জানাটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাকে বার বার তার সামনে তুলে ধরা, তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোটাও গণমাধ্যমের কাজ। একটা গণমাধ্যমের খবর নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি খবর বাছাই করে সেটা কীভাবে, কতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হবে সেটা বুঝতে পারাটাও জরুরি। সাংবাদিকতার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ কিন্তু এখানেই। আমরা কি আদৌ এ চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়ানোর মতো জায়গায় আছি? এ প্রশ্নটা গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত সবার ভাবা উচিৎ, অন্তত একটিবারের জন্য হলেও।

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :