রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল, অপরাধ বাড়ার শঙ্কা

বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার থেকে
 | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩৯

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাঝে মোবাইলফোন ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে। আর এই মোবাইলফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশি বায়োমেট্রিক নিবন্ধনকৃত সিম। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ব্যবহার করছে এই নিবন্ধনকৃত সিম। নগদ অর্থে সহজভাবে নিবন্ধনকৃত এই সিম ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ফলে মোবাইলের সাহায্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

গত মঙ্গলবার রাতে চার্জ করার সময় একটি দোকান থেকে রোহিঙ্গাদের ২০টি মোবাইল সেট জব্দ করেছে পুলিশ। যদিও টেলিটক ফ্রি সেবার প্রতি নেই রোহিঙ্গাদের আগ্রহ।

মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা নানা অরাজকতা ও সহিংসতায় জড়িয়ে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত তাদের দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে দিন দিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে।

অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করছে বলেই তারা বাংলাদেশে আসছে। যখন রোহিঙ্গারা আমাদের ওপর বর্বরতা চালাবে তখন আমরা কোথাই যাব। তাছাড়া তাদের যে ঐক্যবদ্ধতা এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

হামিদুল হক জানান, রোহিঙ্গারা যে সিম ব্যবহার করছে তা বাংলাদেশিদের নামে। মোবাইলের মাধ্যমে তারা কোনো অপরাধ করলে এর জন্য ফাঁসবেন এদেশীয়রা।

আওয়ামী লীগের এই নেতা জানান, উখিয়া-টেকনাফে তিন লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মুজিবুল হক আজাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে নতুন পুরাতন মিলে ১৩/১৪ লাখের কম নয় রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ৭/৮ লাখের মতো শিশু। আর বাকি দুই লাখ বাদ দিলেও তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলায় রয়েছে পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। সেগুলো হলো কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালীর ময়নারমার ঘোনা, টেংখালী তাজনিরমারখোলা, টেংখালী বাঘঘোনা। এই পাঁচ ক্যাম্পে রয়েছে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। টেকনাফে রয়েছে হোয়াইকংয়ের লৈক্যং, লেদা, শামলাপুর ও নয়াপাড়া। এই চার ক্যাম্পে রয়েছে ছয় লাখের চেয়ে বেশি রোহিঙ্গা।

দুই উপজেলায় শিশুরা বাদ দিয়ে সিংহভাগ রোহিঙ্গা মোবাইল ব্যবহার করে বলে জানালেন স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন ও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা ইমাম হোছেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন অনুপ্রবেশকৃত ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ পুরাতন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনকৃত সিম সরবরাহের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে কয়েকটি অসাধু সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের লোকজন কৌশলে ক্যাম্পে ঢুকে এক একটি সিম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। পাশাপাশি টেকনাফ ও উখিয়ার প্রায় দোকনদার নগদ টাকায় রোহিঙ্গাদের সিম সরবরাহ দিচ্ছে।

মিয়ানমারের বুচিডং থানার সাঙ্গমা, ঝুপাড়া গ্রাম থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পালিয়ে আসা ৬২ বছর বয়সি আবুল কালাম ও আবদুর রহিম (৪৪) বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফ নয়াপাড়ার মুচনি ক্যাম্পে। তাদের দুইজনের রয়েছে বাংলাদেশি নিবন্ধনকৃত সিম। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা ঢাকাটাইমসকে বলেন, কয়েকজন যুবক প্রায় সময় এসে ক্যাম্পে সিম বিক্রি করে। ব্যবহারকারীদের সিমটি কার নামে নিবন্ধন করা জানতে চাইলে মোবাইল ব্যবহারকারীরা বলেন, বাংলাদেশি মানুষের নামে। তবে কার নামে তারাও জানেন না।

মংড়ুর খিয়াংবং এলাকা থেকে এসে কুতুপালংয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মো. ইউনুছ (১৮)। বাংলাদেশি সিম কীভাবে হাতে এসেছে জানতে চাইলে ইউনুচ ঢাকাটাইমসকে বলেন, কুতুপালং বাজার থেকে ৫০০ টাকা দামে সিমটি কিনেছি। পরে ৯০০ টাকা দিয়ে মোবাইল কিনেছি।

বুচিডং মরনীর মো. আলম (২৭) ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্মার্টফোন আছে আমার। রোহিঙ্গা হলেও বায়োমেট্রিক সিম কিনতে কোনো সমস্যা হয়নি। লাখ লাখ রোহিঙ্গার কাছে মোবাইল আছে। মোবাইল ব্যবহার না করলে আমরা মিয়ানমারসহ আত্মীয় স্বজনের খবর কীভাবে রাখব।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, উখিয়ার মরিচ্যাপালংয়ের মো. হেফাজ নামে এক যুবক প্রায় সময় ক্যাম্পে সিম সরবরাহ দিয়ে থাকেন। হেফাজ ছাড়াও রয়েছে আর ১০/১২ জন যুবক। এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় হেফাজের সাথে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্থানীয় অনেক লোকজনের নামে একাধিক সিম নিবন্ধন রয়েছে। ওখান থেকে কিছু সিম তারা আমার কাছে প্রায় সময় বিক্রি করে দেয়। আমি (হেফাজ) ওই সিম রোহিঙ্গাদের ২/৩শ’ টাকা লাভে বিক্রি করে থাকি। তবে গত কয়েক মাস ধরে আমি এই ব্যবসায় নাই।

মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে কথা হয় বালুখালীর পুরাতন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান আমির হোছেনের সাথে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, মোবাইল ব্যবহারে কখনো কেউ নিষেধ করেনি।

কুতুপালং এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হেলাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, মোবাইল ব্যবহারের কারণে মারামারিসহ নানা অপরাধ ঘটছে। কিছুদিন পূর্বে কুতুপালং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিককে দিনেদুপুরে কয়েকজন যুবক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে ছুরিকাঘাত করে। তাছাড়া টেকনাফে আনসার ক্যাম্পে গুলি করে আনসার কমান্ডার হত্যাসহ অস্ত্র লুটের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে মোবাইলফোনের যোগাযোগের মাধ্যমে।

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কাই কিসলু ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে এক দোকানে মোবাইলের ব্যাটারিতে চার্জ করা অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ২০টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে। তবে অনেক সময় পর্যালোচনা করে এবং মোবাইল মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় রোহিঙ্গারা যে সমস্ত বায়োমেট্রিক নিবন্ধনকৃত সিম ব্যবহার করছে এর অধিকাংশই উত্তরবঙ্গ কিংবা কক্সবাজার জেলার লোকজনের নামে নিবন্ধনকৃত।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা অবনতি রোধে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু করলেও লাখ লাখ রোহিঙ্গার হাতে বায়োমেট্রিক সিম থাকায় সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিমত সচেতন মহলের। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারামারি, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মুখ্য সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশি মোবাইল সিম। আর এসব সিম বন্ধে অতিসত্বর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :