সিটিং সার্ভিসের নামে হয়রানি, লাইসেন্সবিহীন চালক

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর)
| আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৬ | প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৩

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে কাউন্টার ও সিটিং সার্ভিসের নামে অভিনব কৌশলে চলছে যাত্রী হয়রানি। এ জেলার বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে অসংখ্য ফিটনেসবিহীন বাস, রাতারাতি সিটিং সার্ভিস সেজে নিত্যদিন ঢাকায় বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। বলা হচ্ছে, সিটিং সার্ভিস, কিন্তু বাসের ভেতর নির্ধারিত আসনের চাইতেও অতিরিক্ত আসন যোগ করে যাত্রীদের গুটিসুটি মেরে বেকায়দায় বসে চলাচল করতে হচ্ছে। এ যেন মানুষ নয়, পার্সেল পাঠানো হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে এসব বাস। কিন্তু একরকম বাধ্য হয়েই নোংরা-দুর্গন্ধময় পরিবেশে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাতারাতি সিটিং সার্ভিস হয়ে হওয়া অসংখ্য বাসের ফিটনেস সনদ, রেজিস্ট্রেশন সনদ, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পার্মিট নেই। এছাড়াও গাজীপুরে অধিকাংশ সিটিং সার্ভিস বাস চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটানোর পর এসব পরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে পারছে না পুলিশ। সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো দ্রুত সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে মহাসড়কে ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে।

এদিকে, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত জানুয়ারিতে প্রায় তিন শতাধিক লোকাল বাস সিটিং সার্ভিসে রূপ নেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা।

গাজীপুর থেকে রাজধানীতে চলাচল করা সিটিং সার্ভিসগুলো হচ্ছে- জয়দেবপুর জেলা শহর থেকে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের কাউন্টারভিত্তিক সিটিং সার্ভিস, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা মোড় দখল করে স্ট্যান্ডবাজির মাধ্যমে চলছে বসুমতি সিটিং সার্ভিস। এছাড়াও বলাকা পরিবহনের সিটিং সার্ভিস, অনাবিল ও ছালছাবিল পরিবহনের সিটিং সার্ভিস, গাজীপুর পরিবহনের সিটিং সার্ভিস এবং স্কাইলাইন সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতিদিন শতাধিক ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন বাস গাজীপুর থেকে ঢাকা রুটে চলাচল করছে। আর এসব ফিটনেসবিহীন বাস অবাধ চলাচলের নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু সিন্ডিকেট। গাজীপুর বিআরটিএ দপ্তরের কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় এসব সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বেপরোয়া ঘুষ গ্রহণের কারণে জেলা বিআরটিএ দপ্তর পরিবহন মালিকদের কাছে চরম ভোগান্তি ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও গ্রাহকদের দেরিতে সেবা প্রদান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে নাম ও ঠিকানাসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল প্রদানসহ গ্রাহকদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে এই দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। চলমান এসব অনিয়ম বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বাস মালিকরা পরিবহন ফিট করার চাইতে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর মাসোহারাভিত্তিক তুষ্ট করার পথ। তবে প্রতিমাসে জেলা বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।

অপরদিকে, মাসোহারাভিত্তিক ঘুষ পাওয়ায় এসব ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে গাজীপুর হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, গাজীপুরে মহাসড়ক দখল করে সিটিং সার্ভিসের স্ট্যান্ড গড়ে উঠলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে।

গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের সিনিয়র সহাকারী পুলিশ সুপার সালেহ আহমেদ জানান, প্রতিদিন ৫-৮টি পরিবহন রেকারিং করা হচ্ছে। পরিবহনের ত্রুটিপূর্ণ কাগজ-পত্র থাকায় নিয়মিত মামলাও করা হচ্ছে। জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের অপর্যাপ্ত জনবল ও পরিবহন সংকট রয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :