পদ্মার ইলিশের পেটে এখনও ডিম!

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৪২

ইলিশ শিকারে সরকারঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে। রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন প্রায় সব জেলে। এরপর ওই রাতেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এতে মহাখুশি জেলেরা।

সোমবার রাজশাহীর বাজারগুলোতে উঠেছে প্রচুর ইলিশ। বেশিরভাগ ইলিশই ছোট আকারের। কিছু কিছু বড় ইলিশও রয়েছে। কিন্তু ছোট-বড় দুই ধরনের ইলিশেরই পেটে রয়েছে ডিম। অথচ মা ইলিশ সংরক্ষণ, রক্ষা ও স্বাচ্ছন্দে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতেই ইলিশ শিকারে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জেলার সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজারে। সোমবার ওই আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটার আগেই প্রচুর ইলিশ মাছ উঠেছে আড়তে। দামও কম।

মাসুম আলী নামে এক বিক্রেতা বললেন, ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় নদীতে জাল ফেলা মাত্রই ইলিশ ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। তাই দাম কম।

তবে ভিন্ন কথা বললেন, জামি মাহফুজ পল নামে আরেক বিক্রেতা। তার কথা, নিষেধাজ্ঞার সময়ও ইলিশ ধরা হয়েছে। কিন্তু সেসব ইলিশ প্রকাশ্যে বিক্রি করতে পারেননি জেলেরা। ওই মাছ তারা বরফ দিয়ে কিংবা ফ্রিজে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেসব মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন বাজারে। এতে আমদানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় দাম রয়েছে আগের মতোই।

ব্যবসায়ী আবদুল বারী জানালেন, সকালে তিনি ছোট-বড় আকারের অন্তত ৫০ মণ ইলিশ কিনেছেন। এসব ইলিশের পেটে রয়েছে পরিপক্ক ডিম। ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। ছোট-বড় প্রায় প্রতিটি ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে বলেও জানান আবদুল বারী।

আড়তে মাছ বিক্রি করতে এসেছিলেন জেলে কুরবান আলী। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে একদিনে নদীতে এতো ইলিশ ধরতে পারিনি। ইলিশ ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। মাছ দেখে তো চোখ ছানাবড়া। প্রতিটি ইলিশের পেট ভরা ডিম। ২২ দিন কত কষ্ট করে পদ্মার ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছি। অথচ এখনও ইলিশের পেটে গজগজে ডিম।’

রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন মাছের আড়তের আড়তদার সালেক হোসেন জানান, গ্রাম এবং শহরের ভেতর ইলিশের দাম নিয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই।

সাহেববাজারের ব্যবসায়ী সুজন আলী জানান, পেটভরা ডিম থাকায় প্রথম দিনেই ইলিশের চাহিদা ছিল ব্যপক। সোমবার পর্যন্ত নগরীতে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে কোনো ইলিশ আসেনি।

সকালে সাহেববাজার থেকে দুটি ইলিশ কিনে নিয়ে যান একটি বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপক মীর সালেহ ইকরাম। বিকালে তিনি ফের ওই বাজারে যান মাছ কিনতে। তিনি জানান, সকালে নিয়ে যাওয়া মাঝারি আকারের ইলিশ দুটির পেটভর্তি ডিম ছিল। তার বাচ্চারা ইলিশের ডিম খুব পছন্দ করে। তাই বিকালে তিনি আবার এসেছেন ইলিশ কিনতে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজননের সময়ে ইলিশ দ্রুতগতিতে উজানের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হলে তারা সম্পূর্ণ ডিম পরিপক্ক করে ছাড়তে পারে না। উজানে যেতে বাধা পেয়ে থাকে বলে এ সময় ইলিশের আকার ছোট হয়ে যায়। তবে ছোট হলেও বয়সের ব্যবধানের কারণে তার গর্ভধারণ হয়। সে জন্য ফারাক্কার ভাটিতে রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা নদীতে পেটে ডিম ভর্তি ছোট ইলিশ পাওয়া যায়। আর স্বাভাবিক পরিবেশ না পেলে ইলিশের ডিম ছাড়তে দেরিও হতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম মহসিন বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞাটি ইলিশের ডিম ছাড়ার সাম্ভাব্য সময়। ইলিশ তো আর দিন তারিখ দেখে ডিম ছাড়ে না। তাই এখনও ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য নিষেধাজ্ঞার সময়কাল আরও বেশি বৃদ্ধি করা গেলে ভালো হয়। তবে এই সময় সহায়তা নয়, ব্যবস্থা করতে হবে জেলের বিকল্প কর্মসংস্থান।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পুরো জেলায় ২৬১টি অভিযান চালিয়েছেন মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা। এ সময় ইলিশ শিকার করার অপরাধে ১১ জেলেকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মামলা করা হয়েছে ১৪টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ৪৮০ কেজি। আর জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে তিন লাখ ২৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল।

অপরদিকে ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে জেলার এক হাজার ৮০০ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দিয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর। তারপরেও অনেক জেলে ইলিশ ধরেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাছ ধরতে দেয়ার বিনিময়ে নদীতে তাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এখন পেটভর্তি ডিম নিয়ে ইলিশ ধরা পড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ইলিশের ডিম্বকোষের সব ডিম একসঙ্গে পরিপক্ক হয় না। পরিপক্ক ডিম ছেড়ে দেয়ার পর ডিম্বকোষে যে পরিমাণ অপরিপক্ক ডিম অবশিষ্ট থাকে, ইলিশ তা পরবর্তী সময়ে ছাড়ে। এখন সেসব ইলিশগুলোই ধরা পড়ছে।

মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, এখন পেটে ডিম নিয়ে মা ইলিশ ধরা পড়লেও উৎপাদনে ঘাটতি হবে না। কারণ, মা ইলিশ একবারেই পাঁচ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এই মুহূর্তে মা ইলিশ ধরা পড়লেও তাদের কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :