টাঙ্গাইল-৬: আ.লীগে তারানা বিএনপিতে গৌতম এগিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫৫ | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৩

দুই দলেরই বিজয়ের সম্ভাবনা থাকায় টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তত ১৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ ৬ জন এবং বিএনপির সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীসহ ১০ জন রয়েছেন।

নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৬ আসনে ১৯৭৩ সালের পর ২০০৮ সালের আগে আর কখনো জেতেনি আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বিএনপি জেতে পাঁচবার। ফলে আওয়ামী লীগের চেষ্টা আসনটি নিজেদের কাছে ধরে রাখা, আর বিএনপি চাইছে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে।

এখন পর্যন্ত মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের আগাম প্রচার-প্রচরণা পর্যবেক্ষণ ও নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে বর্তমান ও সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী।

টাঙ্গাইল-৬ আসনটি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত শুধু নাগরপুর উপজেলায় সীমাবদ্ধ ছিল। দেলদুয়ার উপজেলা ছিল টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সঙ্গে যুক্ত। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করে দেলদুয়ার উপজেলাকে টাঙ্গাইল-৬ আসনে যুক্ত করে।

স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত সব কটি নির্বাচনের তথ্য থেকে দেখা যায়, এই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা পাঁচবার, আওয়ামী লীগ দুবার, জাতীয় পার্টি দুবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।

দেলদুয়ার উপজেলা সংযুক্ত হওয়ার পর টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা দেখা দিলেও দলীয় কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালে এখানে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন।

গত ১০ নির্বাচনে সাংসদ যারা

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শওকত আলী খান জয়লাভ করেন। এরপর ৪১ বছর পর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন খন্দকার আব্দুল বাতেন।

বিএনপির প্রার্থী এই আসনে প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৭৯ সালে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেতাব আলী খানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন বিএনপির নূর মোহাম্মদ খান। ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নূর মোহাম্মদ বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি আবার বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এ আর খানকে পরাজিত করে। কোনো বড় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণহীন ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নূর মোহাম্দ খান তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আবু তাহের বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নানকে হারিয়ে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেনকে হারিয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী। ২০০১ সালের নির্বাচনেও গৌতম চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান বাতেন।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সাত

ক্ষমতাসীন দলটি থেকে বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহ্সানুল ইসলাম টিটু দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ করছেন। বর্তমান এমপি খন্দকার আব্দুল বাতেন আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা তারেক শামস খান হিমু, শেখ আব্দুর রহিম ইলিয়াস, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইনসাফ আলী ওসমানী এবং ব্যবসায়ী সৈয়দ মাহমুদুল ইলা লিলু মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন।

বিএনপির চেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী কম হলেও আন্তঃকোন্দলে এগিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলে রয়েছে প্রকাশ্য দ্বিধাবিভক্তি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আব্দুল বাতেন বিজয়ী হন। তখন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহ্সানুল ইসলাম টিটু। সেই থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে দুই দলে বিভক্ত।

এখন আবার বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে।

বিএনপিতে ১০

বিএনপি থেকে অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী টানা দুবার এ আসন থেকে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে বিজয়ী হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এবারও বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন তিনি। সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খানও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল আওয়াল লাভলু, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম স্বপন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আরফান আলী মোল্লা ও অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইউসুব আলী, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী সদস্য ড. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু, উপজেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন খান ও জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার সাদাত খান।

টাঙ্গাইল-৬ আসনের এলাকায় বিএনপির নেতাদের ভেতর পদপদবি না পাওয়া নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় দাগে কোনো কোন্দল নেই। নেতাকর্মীরা আশা করছেন, তাদের হারানো আসনটি এবার পুনরুদ্ধার করবেন তারা।

ভোটার

টাঙ্গাইল-৬ আসনের নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ২৫ হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ১৬ হাজার ৯৫২ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮ হাজার ২৮৯ জন। দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার এক লাখ ৫৯ হাজার ১২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ৩৭২ এবং নারী ৭৯ হাজার ৭৫১ জন।

(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

রুহুল আমিন হাওলাদারের বড় ভাই সুলতান আহমেদ মারা গেছেন

গণতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো: মির্জা ফখরুল

বাসায় মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস: প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান

স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই: মির্জা আব্বাস

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

জামায়াত পরাশক্তির ওপর নির্ভর করে না: রফিকুল ইসলাম

একাত্তরে আওয়ামী লীগের কেউ প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেননি: রিজভী

দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়নের প্রধান প্রতিবন্ধক বিএনপি: কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :