পেটে সন্তান রেখেই অপারেশন সমাপ্তের অভিযোগ

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
 | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪১

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পেটে সন্তান রেখেই অপারেশন কার্যক্রম সমাপ্ত করার অভিযোগ উঠেছে ডা. শেখ হোসনে আরা নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি।

ডা. শেখ হোসনে আরা কুমিল্লার জেলার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. শরীফ হোসেনের স্ত্রী। ডা. শেখ হোসনে আরা এ জন্য দায়ী করেন আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টকে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনে করেন, ডা. শেখ হোসনে আরার এখানে গাফিলতি রয়েছে।

রোগীর স্বজনরা জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের প্রবাসী আউয়াল হোসেনের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে গৌরীপুর লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশন করেন দাউদকান্দির মালিগাঁও ২০ শয্যা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. শেখ হোসনে আরা। এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল আলম। রোগী খাদিজা আক্তারের গর্ভে দুটি সন্তান থাকলেও অপারেশন করে একটি সন্তান বের করে অপরটি টিউমার বলে অপারেশন সমাপ্ত করেন ডা. শেখ হোসনে আরা। পরে দীর্ঘ এক মাস যাবত সন্তান পেটে রেখেই টিউমারের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছুটাছুটি করেন খাদিজা আক্তার। ৫/৬ দিন আগে ওই রোগী হোমনা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পেটে টিউমার নয়, আরেকটি সন্তান রয়েছে। রোগীর পরিবার এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডা. শেখ হোসনে আরাকে জানালে তারা রোগীর সাথে সমঝোতা করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়।

রোগীর মা আমেনা বেগম জানান, দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর লাইফ হাসপাতাল ও ডা. শেখ হোসনে আরা দফায় দফায় রোগীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তী চিকিৎসা বাবদ যত অর্থের প্রয়োজন হয়, তা বহন করবেন বলেও জানায় তারা।

তিনি বলেন, লাইফ হসপিটালের আকবর মোল্লা নামে এক ব্যক্তি তার মেয়ে খাদিজা আক্তারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সাথে রয়েছেন খাদিজার ১ মাস ৫ দিনের মেয়ে আদিবা ইসলাম আলফান। খাদিজার জন্য ১২ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। খাদিজার গর্ভের সন্তানটি মারা গেছে, বুধবার তার আবার অপারেশন হবে।

এ ব্যাপারে ডা. শেখ হোসনে আরা বলেন, আলট্রাসনোগ্রামে বলা হয় খাদিজার পেটে দুইটি সন্তান আছে। কিন্তু সেখানে বলা হয়নি একটি জরায়ুতে, অপরটি বাইরে রয়েছে। অপারেশন করতে গিয়ে একটি বেবি পেয়েছি। বাইরে টিউমারের মতো দেখেছি। রক্তক্ষরণের আশংকায় সেখানে হাত দেয়নি। তবে তাকে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেছি। রোগী অবহেলা করে আর চিকিৎসা নেয়নি। পরে আলট্রাসনোগ্রামে বলা হয়েছে, তার পেটে আরেকটি সন্তান রয়েছে। তবে আমিও আলট্রাসনোগ্রাম দেখেছি। মাথা নেই, পায়ের মতো মনে হচ্ছে। ঢাকায়ও তারা দেখেছেন। তারা এখনও নিশ্চিত নন, বেবি না টিউমার।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. জালাল হোসেন বলেন, এটি একটি জটিল অপারেশন। এ অপারেশন করার মতো দক্ষতা তার নেই। তিনি সমস্যা দেখার পর অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করতে পারতেন। এছাড়া রোগীকে পরবর্তীতে চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারতেন। এখানে তার গাফিলতি ছিল বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :