অরক্ষিত শত কোটি টাকার শুটকি, হিমাগার স্থাপনের দাবি

সাইফুল ইসলাম, নাটোর
 | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১২

মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চল চলনবিল। প্রতি বছর চলনবিলে একশ কোটি টাকারও বেশি শুটকি মাছের উৎপাদন হয়। শুটকি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলে শুকটি মাছ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে মৎস্যজীবী ও শুটকি উৎপাদনকারীরা। ফলে এ পেশায় নিয়োজিতরা প্রতিবছরই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা চলনবিল অঞ্চলে একটি শুটকি সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

মৎস্যজীবী ও শুটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ের উদাসীনতার কারণে ৪৬ বছরেও এ অঞ্চলের শুটকি মাছ রক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও জলাশয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী ও এক শ্রেণির অমৎস্যজীবীদের দখলে চলে গেছে। ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় থেকে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমান চলনবিলে চাহিদার তুলনায় অনেক কম মাছ উৎপাদন হলে তার পরেও প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। মিঠা পানির পুঁটি, টেংরা, কাটা বাতাসি, বোয়াল, শোল, আইকোর, চেলা, বাইম, টাকি ও চাঁদা মাছ এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বেশি। এজন্য এ অঞ্চলের বড় বড় জলাশয়ের ধারে গড়ে উঠেছে শুটকি তৈরির চাতাল।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এ শুটকি মাছ খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। স্বাদে ও পুষ্টিমানের গুণ বিচারে বাজারে শুটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্ষা ও শীত মৌসুমে শুঁটকির উৎপাদন বেশি হয়। এ সময় বাজারে প্রচুর পরিমাণে শুটকি মাছ সরবরাহ হওয়ায় দাম কম থাকে। মাছ সংরক্ষণ করা হলে বছরের অন্যান্য সময় এর চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়ে যায়।

কিন্তু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উন্নত ব্যবস্থা এ অঞ্চলের কোথাও না থাকায় পুরনো মান্ধাতা পদ্ধতিতে খোলা মাঠে ও বিভিন্ন রাস্তার পার্শ্বে রোদে শুকিয়ে এরা কিছুটা সংরক্ষণ করতে পারলেও বেশির ভাগ শুটকি পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ অঞ্চলে উৎপাদিত এই শুটকি মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।

মৎস্যজীবীরা জানান, প্রতি বছর প্রায় লাখ লাখ টাকা মূল্যের শুটকি মাছ নষ্ট হয়ে থাকে। এই কারণে তারা প্রতি বছর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়-এ অঞ্চলের শুটকি সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

শুটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ও ছানোয়ার আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, চলনবিলাঞ্চলে প্রচুর শুটকি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা ও শুটকি সংরক্ষণাগার না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়। শুটকি তৈরির সময় লবণ ছাড়া অন্য কোনো মেডিসিনও মেশানো হয় না। ফলে তাদের শুটকি শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি করেন তারা। চলনবিলাঞ্চলের এই শুটকি রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর ও ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, চলনবিলাঞ্চলে ব্যাপক শুটকি তৈরি হয় বিবেচনা করে উত্তরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুটকি তৈরির জন্য রাজশাহী বিভাগীয় শুটকি উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প ছিল। যার মেয়াদ গত (২০১৬ সালে) বছর শেষ হয়ে গেছে। আর স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি তৈরিতে জাল বা নেট দিয়ে ঘিরে দিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হলে কোনো মাছি, মশা পড়তে পারে না। কিন্তু জাল ব্যবহার করা হলে মাছ শুকাতে দেরি হয় তাই শুটকি চাতাল মালিকরা জাল ব্যবহার করতে চায় না। আর এই অঞ্চলের শুটকি শুকানোর পর পরই রংপুর, সৈয়দপুর সহ বর্ডার পার হয়ে ইন্ডিয়াতে চলে যায়। তাই শুটকি সংরক্ষণাগার খুব বেশি প্রয়োজন না বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :