হিমাগারের আলু নিয়ে চরম বিপাকে ব্যবসায়ীরা

নাদিম মাহমুদ, মুন্সীগঞ্জ
| আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:৫২ | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৪

আলুর বাজারদর কমে যাওয়ায় এবারের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আলুর জেলা খ্যাত মুন্সীগঞ্জের চাষিরা।

চলতি বছর মুন্সীগঞ্জে ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। আলু মৌসুমে ৭৪টি হিমাগারে রাখা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টন আলু রাখা হলেও বর্তমানে হিমাগারে অবিক্রীত প্রায় চার লাখ টন আলুতে লোকসান গুণতে হবে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। হিমাগারে রক্ষিত ৬০ শতাংশ আলু বর্তমানে অবিক্রীত অবস্থায় আছে।

আলুর বর্তমান বাজার মূল্যে লাভ তো দূরে কথা বস্তাপ্রতি উৎপাদন খরচ ১৩৫০-১৪০০ টাকা আর বর্তমান বাজারদর ৬০০-৭০০ টাকা। আলুর দর নিম্নমুখী হওয়াতে আলুর বাম্পার ফলন হলেও বাজারমূল্য কম থাকায় মজুদ করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

হিমাগারে বীজ আলুর পরিমাণ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর চাহিদার তুলনায় আলু বেশি উৎপাদিত হওয়ায় আলুর দাম কমে গেছে। ফলে কৃষক পাচ্ছে না ন্যায্যমূল্য। কোনো কৃষক আর হিমাগার থেকে আলু ছাড় করিয়ে নিচ্ছে না। হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানান, এতে দিন দিন কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

কদম রসূল হিমাগারের ম্যানেজার দুলাল মন্ডল ঢাকাটাইমসকে জানান, আলুর উৎপাদন এবার অনেক বেশি। প্রত্যেক হিমাগার এখন আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ রয়েছে। যা বিগত আলু মৌসুমের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি আলু সংরক্ষিত আছে। বন্যা, যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আলুর স্টক এবার অনেক বেশি। যার কারণে আলুর বাজারদর অনেক কম এবং আলুর উৎপাদন খরচ লোকসানের মুখে। আলু চাষিরা এখন বিপাকে আছেন। সরকার বরাদ্দ ও ভর্তুকির ক্ষেত্রে আলুকে প্রাধান্য দিলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

এলিট হিমাগারের ম্যানেজার আওলাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, বর্তমানে জেলার হিমাগারগুলো আলুতে পরিপূর্ণ। আলুর বাজারটা শুরু থেকেই মন্দা। আলুর দাম কম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। বর্তমানে কাঁচা আলু ৬০০-৬৫০ টাকা, এই বাজার দরে আলু চাষি ৬০০-৭০০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। অনেক আলু অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। বিগত আলু মৌসুমে ৭৫ শতাংশ আলু হিমাগার থেকে বাহিরে যাওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। মাত্র ৫০ শতাংশের কাছাকাছি এখন আলু বের করা হয়েছে। লোকসান হয়েছে, শেষ পর্যন্ত দেখা যাক কী হয় বলে হিমাগারে আলু রেখে দিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা।

আলু ব্যবসায়ী সিদ্দিক বেপারী ঢাকাটাইমসকে জানান, আলু যখন হিমাগারে রাখা হয়েছিল তখন ভাড়াসহ সব মিলিয়ে ১৩০০-১৩৫০টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতি বস্তায় ৬০০-৭০০টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। আলু খেতে অনীহা, চাহিদার তুলনায় অনেক আলু উৎপাদিত হলেও খাদ্য তালিকায় উপস্থিতি কম।

আলু চাষি দিলদার হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, আলুর দাম নেই, ক্রেতাও নেই। পাঁচ দিন ধরে আলু নিয়ে বসে আছি কেউই কিনতে আসছে না। ১০০ বস্তা আলুতে ১০ বস্তাই ফেলে দিতে হচ্ছে পচা থাকার কারণে। মূলধন আসবে কি না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। সামনের বার আমার পাশাপাশি অনেক আলু চাষিই মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, হিমাগার থেকে ৬০০-৭০০ টাকা দরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে এই বছর। যারা আলু উত্তোলন করেই বিক্রি করেছে তারাই লাভবান হয়েছেন। চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদন বেশি। বাজার দর কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, কৃষক এবং হিমাগার মালিকরা। তিনি মনে করেন, আলুর পাশাপাশি ধান রোপন করলে অতিরিক্ত আলু রোপন থেকে বিরত করা যাবে কৃষকদের।

বাংলাদেশ হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি ঢাকাটাইমসকে জানান, আলুর বর্তমান বাজারদর ৫৫০-৬০০ টাকা বস্তা, অথচ কৃষকের বস্তা প্রতি মোট খরচ হয়েছে ১৩৫০-১৪০০ টাকা। ফলে কৃষক বাধ্য হয়েই আর আলু বিক্রি করতে আসে না। তিনি জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ আলু খালাস হয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে ৮০ ভাগ আলু খালাস হতো। আমরা মাছে খাতে বাঙ্গালি। খাদ্য হিসেবে আমাদের আলু উপর বেশি জোর দিতে হবে। কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আলু রপ্তানির ওপর জোর দিতে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন তিনি।

এই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা হিমাগার ব্যবসায়ীরা চরম হতাশাগ্রস্ত। কারণ যদি কৃষক আলু না নেন তবে আমরা লোকসানে সম্মুখীন হবো। শুধু তাই না আমরা কৃষকদের আলু বপনের আগে ঋণ সহায়তা দিয়েছি, সেই টাকা আমাদের উঠবে না। বর্তমানে দেশ থেকে ২০ ভাগ আলু বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি অধিদপ্তর এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমন্বয় করে আলু রপ্তানি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

এদিকে, কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগী ও হিমাগার ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশা আলুর বিভিন্নমুখী ব্যবহার ও বিদেশে রপ্তানি করাসহ খুব দ্রুত দরকার সরকারি উদ্যোগ। এতে কৃষকের হতাশা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :