ট্রাফল চেনেন, ট্রাফল?

কাওসার শাকিল, ঢাকটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:০২

ঘটনাটা এরকম, ফ্রান্সের এক নামকরা রেস্টুরেন্টে একদিন মুখোশ পরা একদল ডাকাত এসে হাজির হলো। ক্যাশ কাউন্টারে গেলো না তারা, কিংবা কোনো খদ্দেরের কাছ থেকেও নিলো না কিছুই। সোজা গিয়ে হামলা দিলো হেশেলের পাশে রাখা একটা ফ্রিজের ভেতর। একটা প্যাকেটের ভেতর কি যেন পেয়ে সেটাই বগল দাবা করে চলে গেলো। ডাকাত চলে যাওয়ার পর রেস্টুরেন্টের মালিক আর কর্মচারীরা চিৎকার জুড়ে দিলো-“হারামজাদার দল! আমাদের সব ট্রাফল চুরি করে নিয়ে গেলো! উফফ ঈশ্বর এখন কি হবে?”

ঐ ছোটো প্যাকেটের মধ্যে যে জিনিসটা ছিলো সেটা হলো একধরনের মাশরুম। নাম তার ‘ট্রাফল’। রেস্টুরেন্ট মালিকের এতো হা হুতাশ করার কারন হলো প্রতি কেজি ট্রাফলের দাম পড়ে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ইউরো, যার মানে হলো প্রতি কেজির দাম পড়ে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় চার লাখ। সাধারনত এই দামের কারণেই ইউরোপের অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতেই কেবল ট্রাফলে তৈরি খাবার পাওয়া যায়। আর

এতো দামী একটা জিনিস নিয়ে গেলে হা হুতাশতো করতেই হবেই।নাম শুনেছেন ট্রাফলের? চেনেন ট্রাফল? এটা হলো একধরনের মাশরুম। তবে যেন তেন মাশরুম না। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মাশরুম হচ্ছে এটা। এক সাধারণত মিষ্টি খাবারের সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার হয় ট্রাফল।

এই ট্রাফল কিন্তু চাষ করা যায় না। অত্যন্ত দামী এই ট্রাফলের জন্ম আর উৎপাদনও মূলত ইউরোপেই। তবে সেও সবখানে হয় না। সবরকম মাটি আর আবহাওয়ায় ট্রাফল জন্মায় না। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া দ্বীপে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন অঙ্গরাজ্যের কিছু বাগানে, স্লোভেনিয়ার বনাঞ্চলে আর ইতালির বিশেষ কিছু অঞ্চলে এবং ফ্রান্সের হাতে গোনা কটা জায়গায় ট্রাফল মেলে। তবে খাবারের অনুষঙ্গ হিসেবেও ট্রাফলকে ভীষনরকম জনপ্রিয় করেছে কিন্তু ইতালি আর ফ্রান্সের রাধুনিরাই।

এই ট্রাফল খুজে বের করার কাজটাও কারো কারো জন্য খুবই লাভজনক পেশা। আর এর ঝক্কিও একেবারে কম নয়। ট্রাফল খোজার জন্য বিশেষ ধরনের কুকুর লাগে। নাম ‘লাগোটো রোমানিয়োলো’। সেই কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঠিকঠাক শিক্ষা পেলে তবেই কুকুর নিয়ে যেতে হয় আগে কখনও ট্রাফল পাওয়া গেছে এমন কোনো একটা জায়াগায়। কুকুর শুকে শুকে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা ট্রাফল খুঁজে বের করে তারা। অবশ্য কেউ কেউ ট্রাফল খুজতে শুয়োর ব্যাবহার করেন। কিন্তু শুয়োরের স্বভাব খারাপ, ট্রাফল শুধু খুজেই বের করে না, খেয়েও পেলে।

ট্রাফল হয় দুই রকমের। সাদা আর কালো। সাদাটা বেশি দূর্লভ বলে দামও বেশি। কালোটা তুলনামূলক ভাবে কম দাম। পোপলার, বিচ, হ্যাজেলনাট, ওক কিংবা উইলো গাছের গোড়ায় গজায় সাদা ট্রাফল। ‘ব্ল্যাক ডায়ামন্ড ট্রাফল’ কালো হীরে বলা হয় যাকে, সেই কালো ট্রাফল অবশ্য ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। মূলত তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চলে গরমকালে দেখা যায় ট্রাফল গজাতে।

চীনেও একধরনের ট্রাফলের দেখা মেলে। তবে একে বলা হয় ট্রাফলের খালাতো ভাই। তার কারন হলো এর মান খুব একটা ভালো না। দামেও স্বস্তা। মাত্র ১৫০ ইয়েনেই পাওয়া যেতে পারে চীনা ট্রাফল। চীনের ট্রাফলগুলো ফরাসী ট্রাফলের চেয়ে অনেক বেশি নরম। ঘ্রাণও অনেক কম। আর এটি চীনের একটি নিয়মিত খাবার। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশকে বলা হয় ‘হার্ট অব দ্য ট্রাফল’। এই মাশরুমগুলো সংগ্রহের জন্য বিশেষ ভ্রমণের আয়োজন করে ইউনানবাসী। অবশ্য একটু ভালো মানের ট্রাফল পেলে সেটার দাম এক থেকে দেড় হাজার ইয়েনও হয়। কিন্তু ইউরোপীয় ট্রাফলের তুলনায় স্বস্তা বলে অনেকেই ফরাসী ট্রাফল বাদ দিয়ে চীন থেকে ট্রাফল কিনছেন। চীনের চেয়েও স্বস্তায় ট্রাফল পাওয়া যায়। নামিবিয়ার কালাহারি মরুভূমিতে। বালুর নিচে লুকিয়ে থাকে এসব মাশরুম। ইউরোপের ট্রাফলের চেয়ে ১০০ গুণ কম দামে কেনা যায় ট্রাফল। তাছাড়া নামিবিয়াতে মাশরুম খুঁজে পেতে কোনো প্রশিক্ষিত কুকুর কিংবা শুয়োর লাগে না। ওখানকার লোকজন মরুভূমিতে ফাটল দেখেই বলে দিতে পারে কোথায় ট্রাফল আছে।

নামিবীয়ার মাশরুম ২ ডলারেই পাওয়া যায়। সেখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে প্রচুর বিক্রি হয় ট্রাফল।

সাদা ট্রাফল সাধারণত ওকগাছের গোড়ায় মাটির নিচে ও বুনো পরিবেশে জন্মায়। মাটির নিচ থেকে তোলার পর চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত ভালো ট্রাফল। ঘ্রাণ অনেকটা চকলেটের মতই। খেতে হয় কেক কিংবা মুসের সাথে। জানামতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাফেলটি খুজে পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার ইয়ারা ভ্যালির এক চাষী। নাম তার স্টুয়ার্ট ডানবার। তার তোলা ট্রাফলটার দাম ছিলো প্রায় ছয় লাখ টাকা। ওজন ছিলো প্রায় দেড় কেজি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :