আবারও বিতর্কে বগুড়া মেডিকেল

স্বজনদের পিটিয়ে হাসপাতাল ছাড়া, পথেই রোগীর মৃত্যু

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
| আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৩৭ | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৩২

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আবারও এক মুমূর্ষু রোগীর স্বজনদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে রোগী ও স্বজনদের বের করে দিয়েছেন তারা। রাতেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবারও রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ এনেছে।

গত ফেব্রয়ারি মাসে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সিরাজগঞ্জ সদরের কোনাগাঁতি গ্রামের আলাউদ্দিন সরকারের ছেলে রউফ ও রউফের বোন ও কয়েকজন স্বজনকে মারধর করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করা হয়। তদন্তে ইন্টার্নদের সম্পৃক্ত পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় মন্ত্রণালয়। পরে চাপের মুখে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ওই ঘটনাতেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ এনেছিল।

সম্প্রতি জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরাণ পৈল গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হন মাহেলা বেগম। মহিলা ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের পাঁচ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে মাহেলার ছেলে গাজীউর ও নাতি ( গাজীউরের ছেলে ) শান্ত কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক আশিকুজ্জামানের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন রোগীকে একটু দেখে যেতে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কর্তব্যরত ইন্টার্নরা চিকিৎকরা। পরে রোগীর দুই স্বজনকে রুমের মধ্যে আটকে বেদম মারধর করেন তারা। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতলে আসলে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঘটনার পর চিকিৎসক নেতারা ও হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইন্টার্নদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের জানানো হয়, ইন্টার্নরা কাউকে মারধর করেনি। রোগীর স্বজনরা নারী ইন্টার্নকে ইভটিজিং করায় সেখানে উপস্থিত অন্যান্য রোগীর স্বজনরা তাদেরকে মারধর করেছে। তারা আহত হলে তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে। এসময় সাংবাদিকরা আহতদের দেখতে চাইলে তা সম্ভব নয় বলে প্রেস ব্রিফিং সমাপ্ত করা হয়।

পরে সাংবাদিকরা হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে যাওয়ার পর রাত তিনটার দিকে রোগী মাহেলা, আহত গাজীউর ও তার ছেলে শান্তকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়। রাতেই তারা জয়পুরহাটের দিকে রওনা হন। পরে রাস্তাতেই মাহেলা মারা যায়।

আহত গাজীউর রহমান মুঠোফোনে জানান, ‘রাতে মায়ের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তিনি কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকের রুমে গিয়ে মাকে দেখার অনুরোধ করতেই তার উপর হামলা চালায়। তাকে উদ্ধার করতে ছেলে শান্ত আসলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে গভীর রাতে আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়। বাড়ি ফেরার পথেই মায়ের মৃত্যু হয়।

ইভটিজিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারাই বলেন, মাকে মৃত্য শয্যায় রেখে কেউ কোনো নারীর সঙ্গে ইভটিজিং করতে পারে? তাছাড়া আমার সঙ্গে আমার ছেলেও ছিল। বাবা-ছেলে মিলে ইভটিজিং করার নজির কোথাও আছে?’

এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হবেও বলে জানান গাজীউর রহমান।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, রোগীর স্বজনরা নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে ইভটিজিং করায় এ ঘটনা ঘটেছে। রোগী মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিল। হাসপাতালে রোগী মারা যায়নি। বাইরে রোগীর মৃত্য হয়েছে।

মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশুতোষ চক্রবার্তী জানান, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :