পায়ে পায়ে রোহিঙ্গা-০৫

রাতে নাফের ওপারে গিয়ে আবার ফেরে বাংলাদেশে!

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:২২

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফে ঠাঁই হয়েছে রোহিঙ্গাদের। পাহাড় কেটে ঘর তোলা হয়েছে। জ্বালানির জন্য উজাড় হচ্ছে বন। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে স্থানীয়রা। এ নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সরেজমিন, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য।

উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুরে লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ। সহযোগিতায় ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন, সৈয়দ ঋয়াদ ও বলরাম দাশ অনুপম। আজ থাকছে পঞ্চম র্পব।

বাংলাদেশে এসেই ক্ষান্ত হচ্ছে না রোহিঙ্গারা। চালাচ্ছে নানা অপতৎপরতাও। রাতের অন্ধকারে নাফ নদী পাড়ি দেয়ার চেষ্টাও করছে কেউ কেউ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে অনেকে। তবে সবাই যে ধরা পড়ছে এটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কী কারণে তারা নাফ নদী পার হচ্ছে?

টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন চেকপোস্টে নিয়োজিত সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতি রাতেই অনেক রোহিঙ্গাকে চেকপোস্ট থেকে আটক করে আবার ক্যাম্পে ফেরত পাঠায়। এসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন ছদ্মবেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করে। তল্লাশি চৌকি থেকে আটকদের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কারণ নদীর ওপারে তাদের স্বজনরা আছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই নাকি তাদের এই চেষ্টা। তবে এ ঘটনার পেছনে তাদের মাদক চোরাচালনসহ অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন সীমান্তরক্ষীরা।

শরণার্থী শিবিরে কাজ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন স্বেচ্ছাসেবী এই সময়কে বলেন, “বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা রাতে ‘কাজত’ যায়।” তবে কোথায় কীভাবে কাজে যায় এই তথ্য তারা খোলাসা করেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি অংশ এখনো মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত আছে। এদের মধ্যে নিবন্ধনধারী রোহিঙ্গারাও আছে। যাদের সরকারিভাবে নিবন্ধনের পর কার্ড দেয়া হয়েছে। তারা নিবন্ধন কার্ডটি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিজিবির হাতে ধরা পড়লে কার্ড দেখায়। কার্ড থাকার পর তিনি বা তারা এখানে কেন এই প্রশ্নের জবাবে নানা অজুহাত দাঁড় করায় দুষ্টুবুদ্ধির লোকগুলো। পরে তাদের আটক করে ফেরত পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে।

অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

ছোটখাটো অপরাধেও জড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। গত ১৮ অক্টোবর কথা হয় বন বিভাগের টেকনাফ সদর বিটের কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে আমি জাদিমোরা এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি কয়েকজন মিলে বেশ হট্টগোল করছে। কাছে গিয়ে বললাম, ঘটনা কী? একজন জানালো তারা রাতে তিনজন চোর ধরেছে। এরা রোহিঙ্গা।’

রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কা-ের খবর এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় জনগণের হাতে ধরা খেয়েছে রোহিঙ্গারা। চুরি, ছিনতাই বা এ ধরনের অপরাধে গণধোলাইও দেয়া হয়েছে কয়েকজনকে। এসব ঘটনার খবর সংবাদপত্রেও এসেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যদের চেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। রোহিঙ্গারা যেভাবে জীবনযাপন করছে তাতে যেকোনো সময় তারা বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের কোনো কাজকর্ম নেই। নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধে জড়াবে। উখিয়ার কুতুপালংয়ে স্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মী আনোয়ার হোসেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা। বললেন, ‘রোহিঙ্গারা জাতিগতভাবে একেবারে আলাদা। এদেরকে ব্যবহার করে স্থানীয় অপরাধী চক্র দেশে বিশৃঙ্খলা চালাতে পারে। কক্সবাজারের মানুষ সেদিক থেকে বেশ ঝুঁকিতে আছে।’

তবে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা মনে করেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন বাহিনী যেভাবে সক্রিয় আছে, তাতে নিরাপত্তা হুমকি সামলে উঠা সম্ভব হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ ভাগই শিশু। তাদের দিয়ে কোনো অপরাধ হবে না। অভাবে পড়ে বড়রা অপরাধে জড়াতে পারে। কিন্তু ত্রাণ কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা-ও থাকবে না।’

ত্রাণ বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা!

ত্রাণের চেয়ে নগদ টাকার প্রতি রোহিঙ্গারা বেশ আগ্রহী। সরকারি ও বেসরকারি দেশি-বিদেশি সংস্থা প্রতিদিন হাজার হাজার টন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে ত্রাণকেন্দ্রে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নারী, পুরুষ, শিশুরা এসব ত্রাণ নিচ্ছে। প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অসুস্থরাও লম্বা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন ত্রাণের আসায়। তবে ত্রাণ পেয়ে তারা পুরোটাই খাবারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করে না। দিন শেষে অনেকের সংগ্রহে প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ত্রাণ থাকে। তখন তারা এসব ত্রাণ স্থানীয় খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে চাল, ডাল, চিনি, তেল, আলু, সাবান এমনকি মশারিও বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেক শরণার্থীকে।

উখিয়ার পালংখালী পান বাজারে কথা হয় স্থানীয় মুদি দোকানি ফজলুর রহমানে সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ত্রাণের মালামাল বিক্রির জন্য দোকানে নিয়ে আসে। গতকালও (মঙ্গলবার) একজন রোহিঙ্গা নারী পাঁচ কেজি মসুরের ডাল নিয়ে এসেছিলেন। ৬০ টাকা কেজিতে ডালগুলো আমি কিনে রেখেছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/এইচএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :