‘সামাজিক বৈষম্য দূর করাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য’
বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ (সিএসবিআইবি)’ এর উদ্যোগে মিডিয়াকর্মীদের সাথে ‘ইসলামি ব্যাংকিং শিল্পের অগ্রগতিতে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং কেমন, এর প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
২৮ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানের জব্বার টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিএসবিআইবর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এম আযীযুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম (আইবিসিএফ) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নুরুল ফজল বুলবুল।
এম আযীযুল হক বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং চালুর অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৮৩ সালে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্বে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটিডের মোট গ্রাহক এক কোটি ২০ লাখ যা দেশের মোট ব্যাংক গ্রাহকের অর্ধেক।
বিশ্বব্যাপী সমাজে যে অসাম্য, তা দূর করাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের ডিপোজিটের টাকা বড়বড় ঋণগ্রহীতাদের দিচ্ছে। সে টাকা দিয়ে তারা সম্পদশালী হচ্ছে। কিন্তু ডিপোজিটকারীরা এ সম্পদের মালিক হচ্ছে না। অর্থাৎ, যার টাকায় সম্পদ হচ্ছে, তিনি সম্পদের কোনো ভাগ পাচ্ছেন না, কিন্তু যিনি সম্পদশালী হচ্ছেন, এর পেছনে তার কোনো টাকা নেই। ইসলামি ব্যাংকিং হচ্ছে সামাজিক মুক্তির একটি ধারণা। সমাজে বৈষম্য দূর করাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য।
আইনের অভাবে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং পুরোপুারি চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের অভাবে ইসলামি ব্যাংকিং পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না। ১৯৮৩ সালে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হাত ধরে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকের গোড়াপত্তন হয়। অথচ তারও বহু বছর পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দেশের ইসলামি ব্যাংকিং সেবাদানকারী ব্যাংকগুলোর ব্যাংকিং সেবা পর্যবেক্ষনের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি করে দেয়। তার আগে ব্যাংকগুলো নিজেরাই নিজেদের কার্যক্রমের তদারকি করত।
দেশের শিল্প বিকাশেও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অপরিসীম ভূমিকার কথা তুলে ধরে এম অযীযুল হক বলেন, দেশের তৈরী পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের। দেশের শিল্পখাতে ৩১ শতাংশ বিনিয়োগ এসেছে ইসলামি ব্যাংকিং থেকে। ইসলামের অন্যান্য বিধান বাস্তবায়ন করা না গেলে দেশে ইসলামি ব্যাংকিংও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি একেএম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন ‘সুদ কেবল ইসলাম ধর্মেই নিষিদ্ধ নয় বরং অন্যান্য ধর্মেও নিষিদ্ধ। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অন্যতম কর্মসুচী হচ্ছে সামাজিক বৈষম্য দূর করা।’
ইসলামি ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করতে ও ইসলামি ব্যাংকিয়ের বিষয়ে মানুষের মনে আরও স্বচ্ছ ধারণা দিতে বাংলাদেশের ফতোয়া বিভাগগুলো ও আলেম ওলামাদের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয় সভায়।
মতবিনিময় সভারটির সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল একিউএম ছফিউল্লাহ আরিফ।
(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/জেবি)