‘সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পাল্টে যাবে বাংলাদেশের চিত্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১৩ | প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫৬

টেকসই নগর উন্নয়নে দেশের সব মেয়রকে একত্রে কাজ করার পক্ষে মত দিয়েছেন নগর ও নগর ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বক্তারা। তারা বলেছেন, মেয়ররা একত্রিত হয়ে কাজ করলে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে পারবেন। পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরী গড়তে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।

বক্তারা বলেন, বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্রের নগরীগুলোতেও নানা সমস্যা ছিল, সেসব সমস্যা সমাধান করেই তারা সফল হয়েছে। একইভাবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের চিত্রও পাল্টে যাবে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের সমাপনী দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সিটিস ফোরাম: বিল্ডিং নলেজ নেটওয়ার্ক অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল আরবান ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক।

এই অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল মিউনিসিপল অ্যাসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ (ম্যাপ), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এবং সুইস এজেন্সি।

সেমিনারে সারাদেশে থেকে তিন শতাধিক মেয়র অংশ নেন। সমাপনী দিনে রবিবার বাংলাদেশের চারটি পৌর পৌরসভাকে চারটি ক্যাটাগরিতে বেস্ট পৌরসভা অ্যাওয়ারর্ড ২০১৭ দেয়া হয়। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বিজয়ী পৌরসভার মেয়রদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পৌরসভাগুলো হলো গোপালগঞ্জ, ফুলপুর, নীলফামারী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রথম অধিবেশনে মডারেট ছিলেন ক্যালিফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট কারবারো। এই অধিবেশনে বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, ২০০৩ সালে পৌরসভা সমিতি গঠন হয়। এ ধরনের অ্যাসোসিয়েশন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক রাষ্ট্রেই আছে। বাংলাদেশেও কিছু উদ্দেশ্যে নিয়ে গঠন করা হয়। আমাদের কিছু দাবি ছিল। যার অনেকগুলোই এখনো পূরণ হয়নি। তবে আশার কথা হলো ২০০৯ সালে পৌরসভা আইনে পুলিশের সহায়তা বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে।

ম্যাপকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। তবেই উন্নয়ন সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, সরকারের নানা সংস্থা আমাদের যেমন সাহায্য চান আমরা সেভাবে কাজ করি। আমরা একটা জরিপে দেখেছি ২০ ভাগ পরিকল্পনাবিদ সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। অন্যরা ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করতে হয়।

মেয়ররাই শেখাবেন মেয়রদের

ফিলিপাইনের মেয়র মেল সেনেন এস সারমিনতো বলেন, আমরা মেয়রদের নিয়ে কাজ করি। সবার মতামত নিই। উন্নয়নে এর বিকল্প নেই। আমাদের দেশে পলিসি ইউনিট গঠন করেছি। যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন পলিসিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হই। মেয়রা আরও ভালো শিখতে পারেন আরেকজন মেয়রের কাছেই। এজন্য নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও যোগাযোগ বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটির মেয়র রালফ বেকার বলেন, আমাদের কোনো ভালো পরিকল্পনা যা সফল গোটা শহরে তা অনুকরণ করা হতো। তখন আমরা বলতাম আমার পরিকল্পনা শহরজুরে ছড়িয়ে গেছে। আমাদের কোনো মেয়র কোনো সমস্যায় পড়লে কীভাবে তা সমাধান করতেন তা আমরা জানতাম এবং শিখতাম একই সাথে চর্চা করতাম। বাংলাদেশের মেয়রদেরও অন্য মেয়রের কাছে শেখার থাকতে পারে।

গ্লোবাল প্রোগ্রাম ম্যানেজম্যান্ট এর পরিচালক ডেভিড গ্রোসম্যান বলেন, বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে কীভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা যায় এর চিন্তা করি আমরা। আমরা নীতিমালার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করি।

আমেরিবকার প্লানিং অ্যাসেসিয়েশনের আন্তর্জাতিক কর্মসূচির পরিচালক জেফ সোল বলেন, শাসন ও নীতিমালা, সংস্কৃতির সম্পদ বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের সম্মেলনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, জাতীয় সম্মেলনে সব মেয়র একত্র হয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে এগুতে হবে। টেকসই উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

যেভাবে পাল্টে গেল ব্রাজিল

অপরিচ্ছন্ন ও অনুন্নত অবস্থা থেকে কীভাবে উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন শহর করেছে ব্রাজিল এর ওপর এরপর কেস স্ট্যাডি হিসেবে ব্রাজিলের কুরিতবা নগরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন চিত্র দেখানো হয়। ব্রাজিলের কুরিতবা রিচার্স এবং শহর পরিকল্পনা ইনস্টিটিউট (আইপিপিইউসি) এর সিনিয়র উপদেষ্টা এলবার্টো মেইন ডি রোচা পেরানহোস বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার শহরে কোনো পরিকল্পনা পাঁচ বছরের জন্য নেয়া হলে তা জাতীয়ভাবে অনুমোদন নেয়া হয়। এটা না নিয়ে করলে মেয়রদেরও শাস্তি থাকে। সে শাস্তি হিসেবে এখনো কেউ কেউ জেলে আছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, কুরিতবা ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের পারানা রাজ্যের রাজধানী। যেখানে মহানগর অঞ্চলে ২৯টি পৌরসভা বিদ্যমান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশ। ১৯৬৫ সালে নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়। যেখানে মাস্টার্স প্ল্যান প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়।

মেইন ডি রোচা পেরানহোস বলেন, ব্রাজিলে পবিবহন বাসের জন্য মাঝ রাস্তা দিয়ে আলাদাভাবে তৈরি। গণপরিবহন হিসেবে বাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ ব্রাজিলে ৭০ ভাগ মানুষ বাস ব্যবহার করে। আমরা জনগণের অধিক মতামতকে গুরুত্ব দিই।

ব্রাজিলের নদী নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শহরে মধ্যে অনেক নদী যা অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমতো। এজন্য নদীর চারপাশের পাড় অধিগ্রহর করে আরও প্রশস্তভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলি। আমাদের শহর আর ময়লা হয় না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা ঘোষণা দিলাম প্রত্যেক কেজি ময়লার পরিবর্তে সবজি দেয়া হবে। ফলে সবাই তার ময়লা নিজে এসে দিয়ে যেত। আমাদের যাওয়ারও প্রয়োজন হতো না, শহরও নোংরা হয় না। এভাবে প্রত্যেক ধাপে ধাপে শহর কীভাবে এগিয়ে যায় তার চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সারাদেশে থেকে তিন শতাধিক পৌর মেয়র অংশগ্রহণ করেন। দেশি-বিদেশি ২০ জন স্পেসালিস্ট বক্তব্য দেন। মোট ৬৫০ জন অংশগ্রহণ করেন বলে জানান আয়োজকরা।

(ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

পালিয়ে আসা সেনাসহ ২৮৮ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাল বিজিবি

উপজেলা নির্বাচনের প্রচারে এমপি নামলে ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর

‘মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে নেমে পরিবহন চাদাঁবাজরা সরকারের আস্থাভাজন হতে চায়’

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও ক্ষতিপূরণ পাননি, কাঁদলেন শ্রমিকরা

৬ বছরে ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৬৭৪, আহত ৪৭৬৫

হজযাত্রীর ভোগান্তি হলে এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ধর্মমন্ত্রী

নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলেই কাজ বন্ধ: মেয়র তাপস 

সুষ্ঠু ভোট করতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে ইসির বৈঠক রবিবার

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :