বিমানের পাইলট সাব্বির সাত দিনের রিমান্ডে

বিমান নিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে প্রেপ্তার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির এমামের সাত দিনের এবং অপর আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবিব শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অপর আসামিদের মধ্যে সাব্বিরের মা সুলতানা পারভীনের পাঁচ দিনের, পারভিনের আত্মীয় আসিফুর রহমান ও মো. আলম আলম এবং সাব্বিরের সহযোগী সাহাদাত হোসেন ওরফে আমির হামজা ও সম্রাট মিয়া ওরফে হুজুরে খোঁজের ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

এদিকে রিমান্ড শুনানিতে আসামি সাব্বির ও তার মা অস্বীকার করে বলেছেন, তারে বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাব- ৪ এর এসআই মো. আমিরুল ইসলাম আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে আসামি সম্রাটের পক্ষে ছাড়া অন্য কোনো আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার ও আমিন উদ্দিন মানিক এবং সহকারী পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন রিমান্ড শুনানিতে প্রত্যেক আসামির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন।

আসামি পাইলট সাব্বির ও তার মা সুলতানা পারভীনসহ পাঁচজনের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য আছে কি না রিমান্ড শুনানিকালে বিচারক জিজ্ঞাসা করলে আসামি সুলতানা পারভীন বলেন, আব্দুল্লাহ আমার বাসায় ১২ বছর ধরে ভাড়া ছিল। ভাড়াটিয়া ছাড়া তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। আমার ছেলে সাব্বিরের সঙ্গেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই। গত পাঁচ বছর ধরে আমার ছেলে আমার বাড়িতে আসে না। আমি তাদের কোনো বিষয় জানি না। আমাকে জোর করে অনেক কিছু বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কখনো কোনো চাঁদা দিইনি। এরপর পাইলট সাব্বির বলেন, গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আমি ফ্লাই করেছি। ফ্লাই করতে হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র লাগে। কোথাও থেকে আমার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ প্রতিবেদন নেই। ২০১৫ সাল থেকে আমার মা সুলতানা পারভীনের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয় না। মা মাঝে মধ্যে আমার বাসায় এলেও আমি ২০১৫ সাল থেকে বাড়িতে যাইনি। আমার মামাতো ভাই আসিফকেও ধরে আনা হয়েছে। মিল্লাতকে আমি তাকে চিনিও না এবং কোনোদিন দেখিও নাই। ২০১১ সাল থেকে আমি ফ্লাই করি। কেউ একজন আমার নাম বললো আর আমি দোষী হয়ে গেলাম? আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই সত্য নয়।

এদিকে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার আসামি বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, আব্দুল্লাহ ভাই যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক আজাদ ও তার স্ত্রী সুলতানা পারভীন আব্দুল্লাহ বাসায় মাঝে মাঝে আসতেন এবং ছাদে উঠে চেয়ারে বসে মাঝে মধ্যে কথা বলতেন। আব্দুল্লাহও তাদের বাসায় মাঝে মাঝে যেতেন। আজাদ তার স্ত্রী সুলতানা পারভীন কামালের মাধ্যমে এক বার সংগঠনের জন্য তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। একবার আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছিলেন আজাদের স্ত্রী সুলতানা পারভীন সংগঠনের জন্য প্রতিমাসে টাকা দেন। আজাদের মেয়ে স্নিগ্ধাও আব্দুল্লাহর সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করতো এবং আব্দুল্লাহর সব বিষয়ে জানতো। আজাদের স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে আসিফ প্রায় সময় আব্দুল্লাহর কাছে যেত এবং কথাবার্তা বলতো। আসিফ ওই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আজাদের স্ত্রী অস্ত্র কেনার জন্য আব্দুল্লাহকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আসিফ একবার একটি নাইন এমএম পিস্তুল বন্ধুর কাছ থেকে এনে বিক্রির জন্য দেখিয়েছিলেন। যার মূল্য ছিল ৭০ হাজার টাকা। আব্দুল্লার সাথে আসিফের গভীর সম্পর্ক ছিল। আজাদের একমাত্র ছেলে সাব্বির বিমানের পাইলট ছিল। গুলশান হামলার আগে বা পরে আব্দুল্লাহ, সাব্বির, ফরহাদসহ (সরোয়ার জাহার সংগঠনের নাম) পরিকল্পনা করে যে, সাব্বির বিমান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবনে ফেলবে বা বিমানযাত্রীসহ সিরিয়ার আইএস ঘাটিতে নিয়ে যাবে।

সাব্বির আরও জানান, কয়েক মাসের মধ্যেই চাকরির ভাতা বাবদ ১০ লাখ টাকার বেশি পাবেন। ওই টাকা সংগঠনের জন্য দিয়ে দেবেন। এই বিষয়গুলো আব্দুল্লাহ সবাইকে জানান। অন্যদিকে আসামি সাহাদাত ও সম্রাট টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার ১(৯)২০১৭ নম্বর মামলায় স্বীকারোক্তিতে আব্দুল্লাহ সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা এবং ঢাকায় এসে আব্দুল্লাহসহ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনার করেছেন মর্মে বলেছেন।

এর আগে গত সোমবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সাব্বির এমামসহ প্রথম চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অপর দুই আসামি টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার ১(৯)২০১৭ নম্বর মামলায় পূর্বেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

র‌্যাবের দাবি, সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করেন। ওই বছরই তিনি বিমানের পাইলটের চাকরি নেন। বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সাব্বির বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ চালাতেন। গত ৩০ অক্টোবর তিনি ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন। তবে জঙ্গি আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নিহত জঙ্গি সারোয়ার জাহানের কাছ থেকে সাব্বির বায়াত গ্রহণ করেন। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার আগে ও পরে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এরই অংশ হিসেবে সাব্বির বিমান চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বাসভবনে আঘাতের পরিকল্পনা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুর মাজার রোডের বর্ধনবাড়ি এলাকায় ‘কমল প্রভা’ নামের একটি বাড়িতে (পাইলট সাব্বির ও সুলতানা পারভীনের বাড়ি) অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান চলার সময় ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণ হয়। অভিযানে জঙ্গি মীর আকরামুল করিম ওরফে উপল ওরফে আবদুল্লাহ (৪৩) ও তার পরিবার আত্মসমর্পণের জন্য সময় নেয়। কিন্তু পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আবদুল্লাহ, তাঁর দুই স্ত্রী নাসরিন (৩৫) ও ফাতেমা (২৫), দুই সন্তান ওসামা বিন আকরামুল (১০) ও ওমর বিন আকরামুল (৩)ও দুই সহযোগী কামাল ও অজ্ঞাত ব্যাক্তি আত্মাহুতি দেয়। ওই ঘটনায় র‌্যাব বিপুল পরিমাণ বোমা, গান পাউডারসহ ২৪ ধরনের আলামত জব্দ করে। এরপর গত ৮ সেপেম্বর বিস্ফোরক আইনের একটি মামলা দায়ের করে সংস্থাটি।

(ঢাকাটাইমস/০১নভেম্বর/আরজেড/জেবি)