স্ত্রীর সন্তান হওয়ায় বিচ্ছেদ ঘোষণা ৮০ বছরের বৃদ্ধের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ০০:১৬

সন্তান জন্ম দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলায় বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

৮০ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম দয়াল মিয়া। তার স্ত্রী শেফালী বেগমের বয়স এখন ৩২। স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, ১৫ দিন পূর্বে জন্ম নেয়া সন্তান তার নিজের ঔরসের নয়। তবে, শেফলী বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন সন্তানের পিতা দয়াল মিয়া।

এ নিয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে বুধবার দুপুরে ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পিলকুনি পূর্ব পাড়া গ্রামে শালিশি বৈঠকে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বৃদ্ধ দয়াল মিয়া।

জানা যায়, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ‘শখ’ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন দয়াল মিয়া। সেই সংসারের ১২ বছর চলছিল। স্ত্রী একটি সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে পারিবারিক কলহের জের ধরে বিবাহ বিচ্ছেদ করলেন।

গ্রাম্য সালিশের প্রধান স্থানীয় ইউপি সদস্য মন্টু মেম্বার জানান, আশি বছর বয়সের বৃদ্ধ দয়াল মিয়ার প্রথম স্ত্রী ১৮ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। ওই সংসারে দয়াল মিয়ার ৩ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। তার ওই ৫জন ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের সংসারেও সন্তান রয়েছে।

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর ৬ বছর ১২ বছর পূর্বে ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকায় শেফালী বেগম (৩২) নামে যুবতীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দয়াল মিয়া। বিয়ের পর তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। শেফালী ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করছেন।

সম্প্রতি শেফালী আরেকটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। সন্তান হওয়ার তিন দিন পরই কাউকে কিছু না জানিয়ে অন্যত্রে সন্তানটি দত্তক দিয়ে দেন শেফালী। বিষয়টি দয়াল মিয়া জানতে পেরে শেফালীকে জিজ্ঞেস করলে এনিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক হয়। পরে দয়াল মিয়া ওই সন্তানকে অবৈধ দাবি করে গ্রাম্য শালিশ ডাকেন।

মন্টু মেম্বার আরো জানান, শালিশে সকলের সম্মতিতে বলা হয়, যেহেতু তাদের বিয়ের কাবিন নেই। মুন্সি দিয়ে বিয়ে হয়েছিল। সেহেতু শেফালীকে দেনমোহর বাবদ ৯ হাজার টাকা দিয়ে দেবেন দয়াল মিয়া। আর তাদের প্রথম সন্তান আহাদ আলী (৮) এখন স্থানীয় পিলকুনি প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার ভরণপোষণ বাবদ মাসে এক হাজার টাকা করে দয়াল মিয়া দিয়ে যাবেন। যদিও দয়াল মিয়া বর্তমানে কোন কাজ কর্ম করেন না।

দয়াল মিয়া বলেন, বয়সের ভারে আমি এখন প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকি। কোনো কাজ কর্ম করি না। নিজের সেবা যতেœর জন্যই বিয়ে করেছিলাম। শেফালী ১৫দিন পূর্বে পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। আমি জানি না। যখন শুনেছি তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। পরে স্বীকার করে সে বললো সন্তানের বাবা নাকি আমি। আমার সন্তান হলে সেতো আমাকে জানাবে। না জানিয়ে আবার অন্যত্রে পালকও দিয়ে দিয়েছে। সে কয়েক বছর হয় আমার সাথে বসবাস করে না। পিলকুনি পশ্চিপাড়া রওশন আরার বাড়িতে ভাড়া থেকে একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করে। তার চরিত্র নিয়ে অনেকে আমার সামনে সমালোচনা করেছিল।

তবে স্ত্রী শেফালী বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সন্তান বৈধ। আমার সন্তানের বাবা আমার স্বামী দয়াল মিয়া। আমার চরিত্র সম্পর্কে আমার আশপাশের বাড়ির সকলে জানে। চরিত্রহীনা হলে ভদ্র মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকতে পারতাম না। এক সন্তান নিয়ে কোন মতে বেচে আছি। এরমধ্যে স্বামীর জোড়াজুড়িতে আরেকটি সন্তান হয়েছে। ভরণপোষণ করতে পারবো না। তাই এক শিক্ষক দম্পতির কাছে সন্তানটি দত্তক দিয়েছি। আমি এ বিচ্ছেদ মানি না। আমার প্রথম সন্তানকে বসবাসের জন্য তার বাবার বসত বাড়িতে এক চিমটি হলেও জমি লিখে দিতে হবে। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো কষ্ট হলেও ছেলেকে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবো।

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :