প্রতারক জাবেদের কোটিপতি হয়ে ওঠার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৫০ | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৭

হজরত শাহজালাল আান্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী জাবেদ। হাজারো প্রতারণার খলনায়ক তিনি। বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটিপতি বনে গেছেন। গাজীপুরে তার মার্কেট, বিলাসবহুল বাড়িসহ কয়েকটি ভবন রয়েছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশের সহযোগিতায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল গতকাল বুধবার জাবেদকে গাজীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার দুই সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্য দুইজন হলেন- বিকাশ এজেন্ট ইউসুফ ও মেহেদী হাসান।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সিআইডির নিজ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, জাবেদ ভোর ছয়টার সময়ে বিমানবন্দরে আসতেন। সেখানে তিনি বিদেশগামী যাত্রী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের তথ্য সংগ্রহ করতেন। যাত্রীদের এমবারকেশন (ইডিকার্ড) ফরম পূরণ করার সময় সহযোগিতার নামে তাদের নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন জাবেদ।

পুলিশ সুপার বলেন, বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানে উঠে গেলে তাদের মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতারক জাবেদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নম্বরে ফোন করতেন। কখনও যাত্রী সেজে কান্নাকাটি করে, কখনও মোবাইল, পাসপোর্ট, ভিসা অথবা বিমানের টিকিট হারিয়ে গেছে বলে জরুরি ভিত্তিতে টাকা পাঠাতে বলতেন। প্রতারক জাবেদ নিজেকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশ পুলিশের কর্মকর্তা, কখনও এয়ারলাইন্সের কর্মী পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাতেন।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, পরে আত্মীয়রা জাবেদের কথা মত বিকাশে জরুরি ভিত্তিতে টাকা পাঠাত। কিন্তু ওই যাত্রী বিদেশে যাওয়ার পর তার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর জানা যেত এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এভাবে বিমানবন্দরে কয়েক হাজারের বেশি বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক জাবেদ।

তিনি বলেন, গাজীপুরে জাবেদের পরিচিত বিকাশ এজেন্টের দোকানও রযেছে। সেখানে টাকার বিনিময়ে নতুন রেজিস্টেশন করা সিমের বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতেন। প্রতারণার কাজে সেই বিকাশ নম্বরগুলো ব্যবহার করতেন জাবেদ।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, চলতি বছরের ১৭ মার্চ মোহাম্মদ আবুল বাশার তার ছেলেকে বিমানবন্দরে বিদায় দিয়ে বাসায় ফেরার পথে প্রতারক জাবেদের সঙ্গে কথা হয়। এসময়ে জাবেদর তার ছেলে সব প্রকার তথ্য নেয় বাশারের কাছ থেকে। পরে প্রতারক জাবেদ তার কাছ থেকে প্রতারণা করে বিকাশের মাধ্যমে ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বাশারে ছেলে বাহারাইনে পৌঁছানোর পর তিনি জানতে পারেন এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে তিনি এ ঘটনায় ১৮ মার্চ মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সাল জাবেদ থেকে কয়েক হাজারের মত লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এর আগে জাবেদ সৌদি আরবে পাঁচ বছর কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এসে ১০ হাজার টাকা বেতনে বিমানবন্দরে কনকর্স হলের ইজারাদারের ভাড়া করা সিকিউরিটি এমকে ট্রেইডার্সে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি নেন। চাকরি নিয়ে প্রতারণা শুরু করে কয়েক কোটি টাকা মালিক হয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত তিনমাসে সাড়ে তিনশ লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জাবেদ। তার বিরুদ্ধে বিমানবনন্দর থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি এবং অন্য থানায় কয়েকটি মামলাও রয়েছে। গাজীপুরে মার্কেট, বিলাসবহুল বাড়িসহ কয়েকটি ভবনের মালিক তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হান উদ্দিন, মো. মিনহাজুল ইসলাম এবং ওয়াহিদুজ্জামান, জেষ্ঠ্য সহকারী পুলিশ সুপার শারমিন জাহান ।

ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/এএ/জেডএ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :