আমেরিকাতেও এমএলএমের ফাঁদ!

দিদারুল ইসলাম মানিক
| আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:২৬ | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:২১

সেন্ট লুইসে একটি শপিং মলের ফাস্টফুডের দোকান থেকে খাবার কিনে ফিরছিলাম। এমন সময় একজন পথ আটকালো। আমি মুখের দিকে তাকালাম। দেখতে সাউথ এশিয়ান।

কোনো আনুষ্ঠানিক কথাবার্তার আগেই জিজ্ঞেস করলো, এখানে কোনো ভালো ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট আছে? আমি বললাম, আমি তো কিছুদিন হলো আসছি, ভালো করে জানি না।

কিছুক্ষণ পরে বললাম, একদিন একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম ওটাতে যেতো পারো।

আলাপচারিতার পর জানলাম সে ভারতীয়। হায়দারাবাদি। পরে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে শুরু করলো। অপরিচিত লোক সাধারণত এতো কথা বলে না।

তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললো, সে পিএইচডি করে এখন একটা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছে। সেটা শুনে ভালো লাগলো। পরে জিজ্ঞেস করলাম কোথা থেকে পিএইচডি করেছেন? বলল, টেক্সাস টেক থেকে। এটা শুনে তো আমার আরও আগ্রহ বাড়ল।

আমি বললাম, টেক্সাস টেক? বলল, হ্যাঁ। পরে জিজ্ঞেস করলো, অবাক হলে যে? আমি বললাম, না, এমনিতেই। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য জানালাম যে আমিও ফল থেকে টেক্সাস টেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করছি।

এরপর তো সে আমাকে পেয়ে বসে। বারবার যাওয়ার তাড়া দিলেও সে আমাকে ছাড়ছে না। পরে জিজ্ঞেস করলো, বর্তমানে কী করো? বললাম, কিছু না। মাঝে মাঝে মলে আসি, ঘুরি-খাই।

এ কথা শুনে বলল, তাহলে তো ভালো। আমার কাছে জব অফার আছে। তোমাকে অফিস করতে হবে না। বাসায় বসেই করতে পারবে।

ঘরে বসেই জব! ইন্টারেস্টিং! আমি বললাম, আমি তো আর বেশিদিন সেন্ট লুইসে নাই। তো, তখন কী হবে? বলল, সমস্যা নাই, টেক্সাসে গিয়েও করতে পারবা। বললাম, কী জব। উত্তর দিলো- একদিন একটা সেমিনারে এসো, তখন সব বুঝতে পারবা।

আমি রাজি হলাম। কারণ, ছোট্ট একটা অ্যাকসিডেন্টের পর আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে বাসার কাছে পড়ে আছে। বেশ কিছুদিন কোথাও যাওয়া হয় না।

দুই দিন পর শনিবার বিকালে সে আমাদের দুজনকে নিতে এলো। ওদের একটা সেমিনার। আমার বাসা থেকে ৩৫ মিনিট ড্রাইভ। ও আসছে প্রায় ৪০ মিনিট ড্রাইভ করে আমাদের নিতে।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে যেখানে ইভেন্ট সেখানে পৌঁছাই। কিছুক্ষণ পর সেমিনার শুরু হলো। ঘটনা কি আগ থেকে অতো আন্দাজ করতে পারিনি। কিন্তু যাওয়ার পর কিছুটা আঁচ করতে পারলাম।

একে একে পরিচয় পর্ব শুরু হলো। এরপর একজন একটা প্রেজেন্টেশন দিল। গত একবছরে সে কীভাবে একশ ডলার আয় করেছে সে গল্প শুনালো।

জানালো, এই ব্যবসায় যোগ দিতে হলে প্রথমে ৫০০ ডলার দিয়ে পণ্য কিনে নিজে ব্যবহার শুরু করতে হবে। পরে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের চেইনের মধ্যে ডুকিয়ে, ৫, ১০, ২০,..৫০, ...১০০ জনের সার্কেল তৈরি করে এক সময় মাসে ৫০০০/১০০০০ ডলারেরও বেশি আয় করা যাবে।

এরপর বেশ কয়েকজন সামনে হাজির করালো, যারা তাদের একশ হাজার (হান্ড্রেড থাউজ্যান্ড) ডলারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই ব্যবসায় যোগ দিয়েছে, কেউ বা ছাড়ার অপেক্ষায় আছে।

এসব শুনে তো মাথা ঘুরতে লাগলো। কোথায় এসে পড়ছি। এতো সেই ডেসটিটি ২০০০। ভাবতে লাগলাম, আমেরিকার মতো জায়গাতেও এরকম টাউটরা আছে। বাংলাদেশি জরাজীর্ণ টাইওয়ালা এলএলএমরাও ওদের কাছে ফেইল।

শেষে আমাদের বেশ কিছু পণ্য ফ্রি দিয়ে দিলো। সাথে যে যেভাবে পারছে ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার জন্য নসিহত করতে লাগলো।

আবার ৩৫ মিনিট ড্রাইভ করে বাসায় দিয়ে গেল। বাসায় এসেই ওদের সব ট্রাস বক্সে ফেলে দিলাম।

পরদিন ফোন দিলো সেই লোক। ধরলাম না। পরপর তিন দিন ফোন এবং টেক্স দিলো।

তিন দিন বাদে টেক্স এলো, "তুমি আগ্রহী না বুঝতে পারছি। ঠিক আছে। তবে, আমি আসছি, আমাদের ম্যাগাজিনসহ সব ফেরত নিতে।"

শুনে তো আমি আকাশ থেকে পড়ি, দুই টাকার জিনিস নিতে সে গাড়িতে ১০ টাকার গ্যাস খরচ করে এগুলো নিতে আসবে?

আমি বললাম, ঠিক আছে নিয়ে যেয়ো। পরে বাসায় বউকে জানালাম, এলএলএম তো ওগুলো নিতে আসতে চায়। বউ উত্তর দিলো-- তুমি না ওগুলো ট্রাশ করে দিছো।..

এরপর ওই লোককে টেক্স করে বললাম, তোমার ওগুলো বাসা থেকে মিসিং হয়ে গেছে।....

এরপর প্রায় চার মাস হয়ে গেছে টেক্সের কোনো রিপ্লাই পাই নাই।

রিপ্লাই না পেলেও এরপর থেকে আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, আসলেই কি সেই লোক পিএইচডি করেছে? সত্যিই কি সে সায়েন্টিস্ট?

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি অধ্যয়নরত

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :