নারায়ণগঞ্জ-৪: শামীম ওসমানে মজেছেন বিএনপি নেতারাও

মাজহারুল ইসলাম রোকন
 | প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:১৩

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলের মনোনয়নের দৌড়ে অনেকটা ফাঁকা মাঠই পাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান। কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের একজন নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ মনোনয়ন চাইবেন বলে দাবি করলেও মাঠের রাজনীতিতে নেই তিনি।

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত এই আসনে দেশের অন্য প্রধান দল বিএনপির নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহ আলম।

ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি। দুই দলেরই নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে গিয়াসউদ্দীন ও শাহ আলমের মধ্যে কোনো একজন লড়বেন শামীম ওসমানের সঙ্গে।

নারায়ণগঞ্জে শামীমের পক্ষ আছে, বিপক্ষ আছে। নিন্দুকের পাশাপাশি আছে প্রশংসাকারী। তার বন্ধু যেমন এন্তার, শত্রুরও অভাব নেই। তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ধারাও অবিরল। তারপরও এ আসনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় মুখ শামীম ওসমান।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ওই আমলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা কর্মকাণ্ডের কারণে পরের দুবার আর সংসদে যেতে পারেননি তিনি। ২০০৮ সালে তো মনোনয়নই পাননি। সেই বিরুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। এবার তিনি স্থানীয় বিএনপির একটি অংশকেও পাশে পাচ্ছেন।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে ভোট ব্যাংক। সিদ্ধিরগঞ্জকে বলা হয় আওয়ামী লীগের অধিক প্রভাবাধীন এলাকা। আর ফতুল্লা থানা এলাকা বিএনপির।

তবে ফতুল্লা থানা এলাকায় বিএনপির প্রভাবের বিষয়টি এবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এখানকার থানা বিএনপির সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বৃহৎ কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু কাজ করছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে। আজাদ বিশ্বাস একই সঙ্গে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। আর সেন্টু থানা বিএনপির আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদেও ছিলেন।

গত ১৯ অক্টোবর ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় ডিএনডি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে শামীম ওসমানের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা আজাদ বিশ্বাস ও মনিরুল আলম সেন্টু। এ দুই নেতা শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানের ব্যাপক প্রশংসা করে বক্তব্য দেন সেখানে।

শামীম ওসমানকে নিজের নেতা বলে দাবি করে আজাদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ শামীম ওসমানের মতো সাংগঠনিক নেতা নারায়ণগঞ্জে আর নেই বলে তিনি জানান আরেক অনুষ্ঠানে।

অন্য একটি অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের প্রশংসা করতে গিয়ে বিএনপির নেতা সেন্টু বলেন, ‘শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন। তাকে আবার জনগণ নির্বাচিত করবে।’

এর আগে ১৫ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জে সমাবেশে এমপি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মতিন প্রধান।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে শামীম ওসমানের একটি শক্ত প্রতিপক্ষ থাকলেও এই সংসদীয় আসন এলাকায় সে রকম বড় কিছু নেই। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো তার মনোনয়নের পক্ষে। ফলে বিএনপির কিছু নেতার শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করাটা তার জন্য বাড়তি পাওয়া।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এ কে এম শামীম ওসমান। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে যখন শুধু ফতুল্লা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছিল, তখন এ আসনের এমপি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। শামীম ওসমান নির্বাচিত হওয়ার পর এ এলাকায় কবরীকে আর দেখা যায়নি। নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন তিনি আর নির্বাচন করবেন না। ফলে শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

বিএনপির মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহ আলম ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। দুজনই দল বদল করে বিএনপির নেতা হন।

একসময় শাহ আলম ছিলেন কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। দল ত্যাগ করে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন। একইভাবে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে এবং আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীন।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন আগে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতির পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েই ধানের শীষ প্রতীকে শামীম ওসমানের সঙ্গে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন গিয়াসউদ্দীন।

এবার মনোনয়নের জন্য মাঠে নামলেও স্বস্তিতে নেই বিএনপির শাহ আলম ও গিয়াস উদ্দিন। বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে গত ১০ অক্টোবর সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মিছিলে নাশকতার অভিযোগে সোনারগাঁও থানায় একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় হুকুমের আসামি হয়েছেন শাহ আলম ও গিয়াসউদ্দীন। তার পর থেকে তারা নির্বাচনী এলাকায় দুজন জনসংযোগ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন। এ দুজন নেতা ও তাদের অনুগতদের মাঝে তুমুল বিরোধ বিভক্তি রয়েছে।

জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পূর্বে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নেতা সালাউদ্দীন খোকা মোল্লাকে প্রচারণায় দেখা গেলেও নির্বাচনের পরে এখন আর তাকে এ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/৪নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :