সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি লেখকের বইয়ের পাঠ উন্মোচন
প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৩১ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৮
সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি শরিফ উদ্দিন-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা প্রবন্ধ গ্রন্থের ইংরেজি ভার্সন এর পাঠ উম্মোচন ও উদ্বোধন হয়েছে। বইটির নাম Stranger to myself বা অচেনা আমি।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় বুগিজের ন্যাশনাল লাইব্রেরির ১৬ তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। পাঠ উন্মোচনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর আয়েশা সিদ্দিকা শেলী।
তিনি তার কথায় বলেন 'লেখক শরিফ উদ্দিন পরবাসী জীবনকে তুলে ধরেছেন। তিনি লেখক ও প্রকাশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুর প্রকাশনী থেকে বাংলাদেশির এই প্রকাশ আমাদের জন্য আনন্দের। শরিফের মতো লেখক কবিরা বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। তিনি আজকের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করছেন। আগামীতে বইমেলাসহ যেকোনো আয়োজনে পাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
লেখক শরিফ উদ্দিন তার কথায় উল্লেখ করেন, ‘সিঙ্গাপুরকে ধন্যবাদ তারা আমাদের কথাগুলোকে তুলে ধরেছেন মানুষের মাঝে। বই থেকে পাঠ ও কথা বলেন অনুবাদক শিভাজী দাস, বইয়ের মুখবন্ধকার গুই লাই সুই, সম্পাদক থিউপিলাস কিউএক। বই থেকে পাঠ করেন জহিরুল ইসলাম, লেখকের বাংলা কবিতা পাঠ করেন মনির আহমদ।
কর্ম অবকাশে প্রবাস জীবনের স্বপ্ন, সাফল্য ও বেদনার শব্দগুলোর সমন্বয় হচ্ছে এই বই। বাংলায় লেখা বইটির ইংরেজি ভাষান্তর ও সম্পাদনা শেষে প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের প্রকাশনী ল্যান্ডমার্ক। শিভাজী দাসসহ বাংলা থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেন রনক জামান, দেবব্রত বসু ও ইমরুল হাসান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশিনের শ্রম ও কল্যাণ সহকারী আল আমিন হোসেন। অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন ল্যান্ডমার্ক প্রকাশনীর কর্ণধার এককান গুহ।
বইটিতে স্থান পেয়েছে ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রবাসী জীবনসংক্রান্ত অন্যান্য প্রসঙ্গ। ১১১টি ছোট প্রবন্ধের সমন্বয়ে ১৭৬ পৃষ্ঠার বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউকে। উৎসর্গ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেখক বলেন, মিশ্র ভাষা ও সংস্কৃতির চমৎকার একটি দেশ সিঙ্গাপুর। আমাদের নিরাপদ জীবিকার জন্য খুব সুন্দর কিছু ক্ষেত্র রেখে গেছেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ, তাই বইটি তাকেই উৎসর্গ করা।
বইয়ের পাতায় পরবাসী ঘ্রাণ আর প্রচ্ছদে এক অপরূপ বাংলাদেশ। লেখক নিজেই সেখানে প্রচ্ছদ, শরীরে বয়ে বেড়ায় বাংলাদেশ।
পরনে লাল শার্ট আর কাঁধে সবুজ ব্যাগ, ইংরেজি বর্ণমালায় লাল-সবুজের সমারোহ সহজেই স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের পতাকার কথা।
বইটি পড়ে যেমন প্রবাসীরা নতুন করে চিনতে পারবে নিজেকে, অন্যরাও জানবে বাংলাদেশির পরবাসী জীবন।
লেখক ও কবি শরিফ উদ্দিন-এর জন্ম বাংলাদেশের ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দিলালপুর গ্রামে। জীবিকার তাগিদে স্থানীয় বাজারে বই বিক্রয়ের পেশা গ্রহণ করেন, গড়ে তোলেন শরিফ লাইব্রেরি। সেই থেকেই তার লেখালেখির প্রতি প্রেম ও বন্ধন গড়ে ওঠে। সিরামিকের ওপর ডিপ্লোমা শেষে ২০০৮ সালে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে।
২০১২ সালে সিঙ্গাপুর প্রবাসী সাহিত্যপ্রেমীদের প্রকাশিত কাব্য সংকলনে স্থান পায় তার কবিতা। দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার অন্যতম মাসিক পত্রিকা বাংলার কণ্ঠের প্রদায়ক ছিলেন কয়েক বছর। সে সময় ডায়রি আকারে বইয়ের বেশকিছু পর্ব নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে বাংলার কণ্ঠে। ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় অভিবাসী কবিতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত হয় তার কবিতা 'শ্রমিকের পথচলা'। সেই কবিতা নিয়ে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ বিবিসিতে প্রকাশিত হয় তার জীবনী ও কবিতা বিষয়ক তথ্যচিত্র।
২০১৬তে সিঙ্গাপুরের স্বনামধন্য লেখক গুই লাই সুই সম্পাদিত 'লেখার দেশ; সাহিত্যে সিঙ্গাপুরের ইতিহাস' বইয়ে স্থান পায় লিটল ইন্ডিয়ার রায়ট নিয়ে লেখা তার কবিতা 'ভেলু ও ইতিহাস'। সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের নিয়ে গঠিত সিঙ্গাপুর বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত 'পরবাসীকথা' কবিতা সংকলনে স্থান পেয়েছে তার দুইটি কবিতা।
এই বছরের নভেম্বরে সিঙ্গাপুর রাইটার্স ফেস্টিভ্যালে থাকবে তার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা পর্ব। তিনি সিঙ্গাপুরের বেশকিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন, ছিলেন সাহিত্য সংগঠন বাংলার কণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ-এর সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সিঙ্গাপুর বাংলা সাহিত্য পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
অনুষ্ঠানটি ভিডিও কাভার করে ইউটিউব চ্যানেল ‘বাবর আলী শো’।
(ঢাকাটাইমস/০৪নভেম্বর/জেবি)