সিপিসির মাধ্যমে বিশ্বে ইতিবাচক বাংলাদেশের তথ্য পাঠাব

আলাউদ্দিন আলিফ
| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪৫ | প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৭

১ নভেম্বর রাজধানীতে শুরু হয়েছে সিপিএর ৬৩তম সম্মেলন সিপিসি-২০১৭। তবে আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সিপিএর ভাইস প্যাট্রন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে অংশ নেবেন কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৪৫টি রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রাদেশিক পার্লামেন্টসহ ১৮০টি শাখার মধ্যে শতাধিক শাখার প্রায় ৫৫০ জন জনপ্রতিনিধি।

সিপিএর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সিপিএ সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। স্পিকারের একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাটাইমসের প্রদায়ক আলাউদ্দিন আলিফ

ঢাকাটাইমস: বিশ্বদরবারে নিজেদের তুলে ধরতে ৬৩তম সিপিএ সম্মেলন একটা বড় সুযোগ বাংলাদেশের জন্য। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কী আশা করছে এবং নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইছি।

ড. শিরীন শারমিন: আমাদের এই সম্মেলনে অংশ নিতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছেন। সিপিএর সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসেছেন। বিশ্বের এতগুলো দেশ থেকে যারা আসবেন (সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার) তারা এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন এবং সফলতা, পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা সারা বিশ্বে যে সুপরিচিত, সে বিষয়টিও তারা কাছ থেকে দেখবেন।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের গণতন্ত্র যে আজকে সুসংহত সেই বিষয়টির ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বে আমরা ইতিবাচক বার্তা পাঠাতে পারব এই সম্মেলনে।

স্পেশাল ইকোনমিক জোন হিসেবে আমরা যে ১০০টি ইইজেড খোলার কাজ হাতে নিয়েছি, সেখানে আমরা অনেক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। সেই বিষয়গুলোও আমরা তাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারব।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি, বর্তমানে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হব, এ বিষয়গুলো আমরা বিশ্বদরবারে এই জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তুলে ধরব।

বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় সংসদ যে কার্যকর এবং সক্রিয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে সেই বিষয়টিও এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে আরেকবার জানানোর সুযোগ ঘটবে।

ঢাকাটাইমস: রোহিঙ্গা ইস্যু এখন বাংলাদেশ ও বিশ্বের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতমবাংলাদেশ মানবিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করছেএই সম্মেলনে এই ইস্যুটি কতটা গুরুত্ব পাবে?

ড. শিরীন শারমিন: আমরা জানি যে, নির্যাতনের শিকার ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই বিষয়টি নিয়ে কমনওয়েলথের সংসদ সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি জানতেও আগ্রহী তারা। আমরা বাংলাদেশের বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তাদের জানানোর জন্য একটি বিশেষ সেশন (৫ নভেম্বর) এই সম্মেলনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথভুক্ত সংসদ সদস্যদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করতে চাই।

আমি মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি এবং তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। ‘ব্রিফিং অন রোহিঙ্গা ইস্যু’নামে এই সেশন অনুষ্ঠিত হবে। মতবিনিময় সভায় আমরা জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্নোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করব।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়টি সেখানে উপস্থাপিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন সেই বিষয়টিও আমরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরব।

ঢাকাটাইমস: সম্মেলনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই?

ড. শিরীন শারমিন: আপনারা জানেন, সিপিএ একটি পার্লামেন্টারি ফোরাম। সিপিসি হলো এই ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন। এখানে অনেক ধরনের কাজ থাকে। সাধারণ অধিবেশন শুরুর আগে বেশ কিছু কাজ হয়। সেগুলো শেষ করা হয় ২ থেকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে। এখানে কমনওয়েলথ উইমেন পার্লামেন্টিরিয়ান রয়েছেন, তাদের অনেকগুলো সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাথে নির্বাহী কমিটির মূল এজেন্ডা নির্ধারণের মিটিংগুলোও এখানে হয়। নির্বাহী কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুসারে ভবিষ্যতে সিপিএ পরিচালিত হবে। এ ছাড়া প্ল্যানিং অ্যান্ড রিভিউ সাব কমিটির মিটিং, ফাইন্যান্স সাব কমিটির মিটিং, স্মল ব্রাঞ্চেস কনফারেন্স, রিজিওনাল গ্রুপ মিটিং, প্রোগ্রাম কমিটির মিটিংসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।

১ নভেম্বর থেকে জনপ্রতিনিধিরা দেশে আসতে শুরু করেন। ৫ নভেম্বর মূল সম্মেলন উদ্বোধন হওয়ার পরের তিন দিন আটটি ওয়ার্কশপসহ জেনারেল অ্যাসেম্বলি অুনষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

যেসব জনপ্রতিনিধি সম্মেলনের শেষ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবেন আমরা শেষ দিন তাদের নিয়ে একটা ডেআউট করার পরিকল্পনা করেছি। আর যেসব জনপ্রতিনিধি সিডব্লিউপি কমিটিতে রয়েছেন, তাদের নিয়ে একটি বিশেষ প্রোগ্রামের আয়োজন থাকবে। এই প্রোগ্রামের আওতায় মহিলাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ পোশাক কারখানা পরিদর্শন করিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি প্রত্যক্ষ ধারণা দেয়া হবে।

ঢাকাটাইমস: সিপিএর প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার তিন বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনে কি নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?

ড. শিরীন শারমিন: এই সম্মেলনে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের পর আমার মেয়াদ পূর্তি হবে। তবে এই সময়ের বিশেষ সংবাদ হলো সিপিএ ও আইপিইউর চেয়ারপারসন নারী। এটা বেশ গৌরবের বিষয়। দুটি আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি সংগঠনে একসঙ্গে দুজন নারী প্রতিনিধিত্ব করছেন, এটা বিরল ঘটনা।

ঢাকাটাইমস: অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সিপিএ কি ভূমিকা রাখতে পারে?

ড. শিরীন শারমিন: অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সিপিএ ভূমিকা রেখেছে, রাখছে এবং রাখবে। ডাইভার্সিটি একটা প্লাটফর্ম যেটাতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সব সংসদীয় আইন প্রণেতারা অন্তর্ভুক্ত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিয়তই জনগণের এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন। বৈষম্য নিরসন, জীবনমান উন্নয়ন, সুন্দর ও সুষ্ঠু জীবন নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, গণতন্ত্র শক্তিশালী করার মাধ্যমে কীভাবে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা যায় তা নিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত জনপ্রতিনিধিরা অবশ্যই আলোচনা করবেন এবং সিপিএর ভূমিকা নিশ্চিত করবেন।

ঢাকাটাইমস: প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে পরিকল্পনা করেছেন, তা বাস্তবায়নে বিদেশিদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে সিপিএ সম্মেলনে কোনো ধরনের সেশন রাখা হয়েছে কি না?

ড. শিরীন শারমিন: তথ্যপ্রযুক্তির জন্য আলাদা কোনো সেশন না থাকলেও জেনারেল যে আলোচনাগুলো হবে সেখানে অর্থনীতির উন্নয়নে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষেত্রগুলো উপস্থাপন করা হবে। সিপিএ সম্মেলনে আগত জনপ্রতিনিধিরা অবশ্যই এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মাননীয় স্পিকার

ড. শিরীন শারমিন: আপনাকে এবং ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৫নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :