টাঙ্গাইল-৪: লতিফের আসন এখন সোহেলের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:০১

বেফাঁস কথা বলে এমপি পদ ও মন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকে রাজনীতিতে একরকম আড়ালেই চলে গেছেন আওয়ামী লীগের একসময়ের প্রভাবশালী নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল-৪ নির্বাচনী আসনে প্রায় নিয়মিত পাস করা এই জনপ্রিয় নেতার অনুপস্থিতিতে সেখানে এখন তার স্থান দখল করেছেন দলের বর্তমান এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের আরো অনেকের আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তায় অনেকটা এগিয়ে গেছেন সোহেল হাজারী।

অন্য প্রধান দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন-দৌড়ে অনেকে মাঠে নামলেও স্পষ্ট এগিয়ে থাকার মতো কোনো নেতাকে এখনো আলাদা করে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের শাহজাহান সিরাজকে হারিয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এরপর গত দশটি সংসদ নির্বাচনের ছয়টিতে বিজয়ী হন তিনি। আরো একবার এমপি নির্বাচিত হন তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী। ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া গত ২৬ বছরে এ আসনটি ছিল লতিফ সিদ্দিকীর শাসনে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমেরিকার পালকি কমিউনিটি সেন্টারে টাঙ্গাইল সমিতির সংবর্ধনা সভায় হজ, তাবলিগ, প্রধানমন্ত্রী-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে রোষানলে পড়েন দল ও সাপধারণ মানুষের। পরিণতি দল থেকে বহিষ্কার হন। ছাড়তে হয় মন্ত্রিত্ব।

এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর টাঙ্গাইলও মন্ত্রিত্বশূন্য হয়। দীর্ঘ আট মাস মন্ত্রীশূন্য থাকার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করেন অ্যাডভোকেট তারানা হালিম।

মন্ত্রীর শূন্যতা পূরণ হলেও টাঙ্গাইল-৪ শূন্য আসনের উপনির্বাচন হতে সময় লেগে যায় ১৪ মাস। প্রথমে এর দিন ধার্য ছিল ওই বছরের ২৮ অক্টোবর। আইনি জটিলতায় পড়ে ওই আসনের নির্বাচনের দিন ধার্য হয় ১০ নভেম্বর। উপনির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর ভাই বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিলের ঘটনায় মামলায় গড়ালে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। কাদের সিদ্দিকীর করা রিট চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দিলে উপনির্বাচনের বাধা কাটে। প্রায় ১৪ মাস পর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ওই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী নির্বাচিত হন।

নির্বাচিত হওয়ার পর চোখে পড়ার মতো বড় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে না পারলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। লতিফ সিদ্দিকীর আসনটি ধীরে ধীরে সোহেল হাজারীর আয়ত্তে চলে যায়। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবার আগে সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে।

সোহেল হাজারী সপ্তাহের ৪-৫ দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকায় জনসংযোগ করেন। সময়-সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন, কুশল বিনিময় করেন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই জনপ্রিয় এখন সোহেল হাজারী।

আ.লীগের মনোনয়ন পেতে আরো যারা মাঠে

টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসনে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার অনুপস্থিতিতে দলের সর্বেসর্বা এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু। তিনি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু নাসের গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি যদি না চান তবে তার স্ত্রী সাবেক সাংসদ বেগম লায়লা সিদ্দিকী মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে।

বিএনপি

টাঙ্গাইল-৪ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন-দৌড়ে অন্তত আটজনের নাম জানা যাচ্ছে যারা দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। তাদের অনেকে বেশ আগে থেকে এলাকায় জনসংযোগ করছেন।

এই আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী হতে পারতেন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাহজাহান সিরাজ। কিন্তু তিনি অসুস্থ। তার স্ত্রী বেগম রাবেয়া সিরাজ বা ছেলে রাজিব আহমেদের (অপু সিরাজ) মনোনয়ন চাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এ ছাড়া কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন, মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমান বাদল, সাবেক ছাত্রনেতা বেনজীর আহমেদ টিটু, এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শাফি খান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এস এম এ খালিদ দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

বিগত দিনে সাংসদ ছিলেন যারা

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের শাহজাহান সিরাজকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাসদের শাহজাহান সিরাজের কাছে হেরে যান।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লায়লা সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাসদের শাহজাহান সিরাজকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন জাসদের শাহজাহান সিরাজ। ১৯৯০ সালে শাহজাহান সিরাজ জাসদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

এরপর ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাহজাহান সিরাজ ও আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী একে অপরের মোকাবেলা করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৬ (১২ জুন) আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও ২০০১ সালে শাহজাহান সিরাজ নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জয়ী হন। ২০১৪ সালে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি হওয়ার পর তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়।

জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গাইল-৪ আসনে এবার মোট ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৩২ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬০ জন। তবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার সংখ্যা হালনাগাদের মাধ্যমে বাড়তে পারে।

(ঢাকাটাইমস/৬নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :