ভূমিদস্যুদের পেটে কক্সবাজার বন বিভাগের পাহাড়-জমি
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন পিএমখালী রেঞ্জের অধিকাংশ সংরক্ষিত পাহাড় ও জায়গা দখলে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। সেই জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে প্লট তৈরি করে তা মোটা অঙ্কে বিক্রি করছে চক্রটি।
দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যু চক্র এই দখলের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ নজরে আসার কথা জানান খোদ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ।
সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিএমখালী রেঞ্জের অধীনে ২৫৭৯.৬৫ একর জায়গা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এর ৭০ ভাগের বেশি জায়গা বেদখল করেছে স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রটি। তারা সেখান থেকে মাটি কেটে তা পিকআপ ডাম্পার দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। এরপর সেখানে প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাটি কাটা ও প্লট বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে পিএমখালী পরানিয়া পাড়ার ওবায়দুল করিম ও চেরাংঘাটার মোবাশে^র কোম্পানীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাহাড় কেটে মাটি পরিবহণের জন্য অর্ধশতাধিক লাইন্সেসবিহীন পিকআপ ডাম্পার।
এই সিন্ডিকেটের অনেকের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, পিএমখালীতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাটি ভর্তি ডাম্পার আটকসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০টির বেশি মামলা করা হয়। এরপরও কীভাবে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে ভূমিদস্যুরা তা বোধগম্য নয়।অভিযোগ উঠেছে, পাহাড় কাটা ও প্লট বিক্রি নির্বিঘœ করতে ভূমিদস্যু চক্রটি বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোহারার বিনিময়ে যোগসাজশ করে। আর ডাম্পার দিয়ে মাটি পরিবহনের ক্ষেত্রে হাত করা হয় সদর মডেল থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে।
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, পাহাড় কাটা রোধকল্পে বেশ কিছুদিন আগে পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদে এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ওই উদ্যোগ কাগজে-কলমে আর কথার ফুলঝুড়িতেই রয়ে গেছে। বাস্তবায়নের কাজ হয়নি কোনো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, শতাধিক পাহাড় রয়েছে সদরের পিএমখালীতে। প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার দৃশ্যগুলো চোখে পড়ে। এ পর্যন্ত পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা ১৭৬টি মামলার তদন্ত চলছে। ৫০টির মতো মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। পিএমখালীতে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পাহাড় কাটার সিন্ডিকেট সদস্য বলে অভিযুক্ত ওবায়দুল করিমের দাবি, পিএমখালীতে বর্তমানে তার কোনো ডাম্পার নেই। তার ডাম্পারটি একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
পিএমখালীতে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) হক মাহাবুব মোর্শেদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও অভিযান চালিয়ে মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার আটক করা হয়েছে।’ পাহাড় কাটার ঘটনায় পিএমখালী রেঞ্জারের নীরব ভূমিকার বিষয়টি তার নজরে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে তদন্ত টিম করে এসিএফের মাধ্যেমে যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে।’
(ঢাকাটাইমসক/৬নভেম্বর/মোআ)