একজন পুলিশ কর্মকর্তার মানবিকতা!

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:২৩

পুলিশ সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম শুধু পুলিশেরই আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় কিছু পুলিশের বিকৃত কাজে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ নামটি সাধারণ মানুষের কাছে বন্ধুর পরিবর্তে আতঙ্কে পরিণত হয়।

পুলিশ মন্দ, আবার পুলিশই সর্বোচ্চ মনুষ্যত্বের অধিকারী। এরকম একজন পুলিশ সদস্যকে চোখে পড়েছে টাঙ্গাইলে। যিনি শুধু পুলিশ নন সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলীর অধিকারীও। নাম আসাদুজ্জামান টিটু। টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক। কাজের ফাঁকে অন্যের জন্য কিছু করাটা তার প্রতিমুহূর্তের ভাবনা। একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিজের মনে করে তার দায়িত্ব নেয়াটা অনেকেরই নজর কেড়েছে। হৃদয় স্পর্শ করে নিয়েছেন তার ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগ।

বারো বছরের প্রতিবন্ধী আব্দুল্লাহ। শহরের আকুরটাকুর পাড়া থাকে সে। অল্প উপার্জনে আব্দুল্লাহর বাবা যখন নির্বাক দর্শক তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক। একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়ে প্রতিবন্ধী আব্দুল্লাহর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। দায়িত্ব নিয়েছেন পড়ালেখা করানোরও। প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশপ্রধানের কাছ থেকে পুরস্কৃত হন তিনি। আইজি'জ ব্যাজ বাবদ অর্থও পান।

অল্প আয়ের সংসার থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন আব্দুল্লাহর মা রহিমা। মায়ের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীতে বাবাই আব্দুল্লাহ একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু ছেলেকে সময় দেয়ার মতো অবসর সময়টাও নেই আব্দুল্লাহর বাবা জয়নালের। দিনভর থাকতে হয় চা স্টলে। সংসার চালতে চায়ের দোকাটি যেন তার একমাত্র অবলম্বন। কিছুদিন আগে এস আই আসাদুজ্জামান টিটু গোয়েন্দা শাখায় চাকরি করেন জেনে একটি অব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার দিয়ে জয়নাল তার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে দিতে বলে, নইলে মা ছাড়া তার প্রতিবন্ধী শিশুকে বাঁচাতে পারবে না। প্রায় তিন মাস পর আব্দুল্লাহ'র মায়ের সন্ধান পাইয়ে দেয় তিনি। ঢাকার কোনো একটা কিন্ডার গার্ডেনে চাকরি নিয়েছেন আব্দুল্লাহ'র মা। স্বামী ও একমাত্র প্রতিবন্ধী সন্তানের অনুরোধে জুন মাসে ঘরে ফিরে আব্দুল্লাহর মা।

প্রায়ই চোখে পড়ে, পুলিরে চাকরির ব্যস্ততার পরও আব্দুল্লাহকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে কিছু ব্যায়ামে অভ্যস্থ করার চেষ্টা করছেন। একজন গৃহশিক্ষকও রেখে দিয়েছেন আব্দুল্লাহকে তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি কেবল শিশু আব্দল্লাহ নয় এমন আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিশু, হতদরিদ্র, বার্ধক্যজনিত কারণে সমস্যাগ্রস্ত মানুষের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সহায়ক দিক নির্দেশনা, পরামর্শ এবং বিনোদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ার শহীদুল ইসলাম সোহেল বলেন, প্রায় দিন বিকালে ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান টিটু স্যার দোকানের সামনে এসে নিরক্ষর শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই শিশুকে হাতে কলমে অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমনকি একজন শিক্ষকও রেখে দিয়েছেন। তিনি আশপাশের দরিদ্র মানুষের খোঁজখবর নেন। এমনকি প্রতি শুক্রবারে একশ টাকা দিয়ে একজন লোক রেখে দিছে আব্দুল্লাহকে নিয়ে বেড়ানোর জন্য।

পুলিশের ওই কর্মকর্তার আদরে আব্দুল্লাহ অনেকটায় ভক্ত হয়ে উঠেছে। আব্দুল্লাহ বলেন, উনি পুলিশ না। তিনি আমার আঙ্কেল।তিনি আমাকে অনেক আদর করেন। আঙ্কেলকে (এসআই টিটু) টাঙ্গাইল থেকে চলে গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে।

আব্দুল্লাহর বাবা জয়নাল বলেন, অনেক পুলিশ অফিসার দেখেছি কিন্তু তার মতো দেখি নাই। সবার সাথেই সুসম্পর্ক তার। আমার একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছেন তিনি। আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। পৌনে তিন বছর যাবত আমার ছেলেকে দেখাশোনা করছেন তিনি।

এই বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান টিটু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইউনিফর্মের ভেতরের মানুষ হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের বেশ কিছু সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য থাকাটাই স্বাভাবিক। মানুষের জন্য কিছু করতে হলে অন্য সব উপাদানের চেয়ে ইচ্ছা শক্তিই প্রধান। কেন জানি এ ধরনের মানুষের মুখে হাসি দেখতে ভালো লাগে। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো বিশেষ প্রতিভার অধিকারী। আমাদের উচিত হবে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং তার যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে স্ব-প্রতিভায় স্বাবলম্বী করে তোলা।

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/আরকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :