দিনাজপুরে বাড়ছে তালগাছ রোপণের আগ্রহ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ১০:১১

জলবায়ু পরিবর্তন ও বজ্রপাত প্রতিরোধে দিনাজপুরের মানুষের মধ্যে তালগাছ রোপণে আগ্রহ বাড়ছে। এই বর্ষায় সড়কের ধার, বসত ভিটাসহ যেখানে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছেন সেখানেই তাল বীজ রোপণ করেছেন। এর আগে লাগানো তাল গাছগুলো এরই মধ্যে প্রাকৃতিক শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে।

বজ্রপাতে মানুষ ও গবাধিপশু হতাহতের হাত থেকে রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় দিনাজপুরে সরকারি উদ্যোগে এবছর ৫০ হাজার তাল বীজ রোপণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আলাদা করে তাল গাছ রোপণ করছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক আরিফুর রহমান আরিফ জানান, সদর উপজেলার নশিপুর নদীয়াপাড়ায় ১০ বছর আগে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে লাগানো তালগাছগুলো সুন্দর হয়ে উঠেছে। এই উদ্যোগ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের পরিবেশ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডক্টর মো, সরিফুল বারী জানিয়েছেন, বজ্রপাতের ক্ষতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি তালগাছ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, উঁচু গাছেই বেশি বজ্রপাত হয়। উঁচু গাছ থাকলে এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি লাঘব হয়। বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য উঁচু তালগাছই সবচেয়ে কার্যকর।

তিনি আরো জানান, তালগাছ বজ্রপাতে শুধু প্রাণহানিরোধই নয়, পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে। তাই দেশে মাঠ-ঘাটে ফাঁকা জায়গায় তালগাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নাই।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দিনাজপুরে তালগাছ লাগানো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সড়কের দুই ধারে ছাড়াও বসত ভিটার আশপাশে তালগাছের বীজ রোপণ করছে অনেকেই। ১০ বছর আগে লাগানে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই ধারে তালগাছগুলো দৃষ্টিনন্দিত হয়ে উঠেছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগেও চলছে তাল বীজ বপনের কাজ।

সম্প্রতি একদিনে দিনাজপুরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। এছাড়াও ওই দিন বজ্রপাতে আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। গত এক বছরে দিনাজপুরে বজ্রপাতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মারা গেছে বেশ কিছু গবাদিপশু। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখিত হয়ে পড়েছে। তাই এসব মোবাবেলায় দিনাজপুরে তাল গাছ লাগানো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দিনাজপুরে ১০ বছর আগে থেকে একটি সংগঠন প্রায় পাঁচ কিলো মিটার দীর্ঘ সড়কের দুই ধারে লাগাচ্ছে তাল গাছ। ইতোমধ্যে তাল গাছগুলো দৃষ্টি নন্দিত হয়ে উঠেছে। নশিপুর সিআইজি কৃষক সমবায় সমিতির নামে এই সংগঠনটি ২০০৭ সালে থেকে প্রায় ৫০ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছে।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিনাজপুরে প্রাণহানিসংখ্যা দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি। বজ্রপাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সরকার সারা দেশে বেশি করে তালগাছ রোপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দিনাজপুরে সরকারিভাবে ৫০ হাজারের মতো তাল বীজ বোপন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বোপন করেছে এ তাজ বীজ।

তালগাছ বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উঁচু গাছেই বেশি বজ্রপাত হয়। উঁচু গাছ থাকলে এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি লাঘব হয়। বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য উঁচু তালগাছই সবচেয়ে কার্যকর বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

এছাড়া তালগাছ দীর্ঘদিন জীবিত থেকে মানুষের উপকার করে। তালগাছ থেকে ঘর নির্মাণের মূল্যবান কাঠ ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এ গাছ রস ছাড়াও কাঁচা ও পাকা সুস্বাদু ফল দিয়ে থাকে। তাল গাছের নানা উপকারিতা রয়েছে। যেমন তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, চাটাই, মাদুর এবং কাণ্ড দিয়ে বাড়ি ও নৌকা তৈরির কাজ হয়। তালের ফল এবং তালশাঁস পুষ্টিকর খাদ্য। তাল গাছের কাণ্ড থেকে রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি তৈরি হয়। এই গাছ দীর্ঘজীবী। কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে এবং ফল দেয়।

(ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/এসএএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :