সিংড়ায় সুতিজালে প্রভাবশালীদের মাছ শিকার, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ১০:২৯

নাটোরের সিংড়ার আত্রাই নদীতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ, সুতিজাল দিয়ে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করছে দলীয় কর্মীরা। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মসজিদ-মাদ্রাসার নামে আত্রাই নদীজুড়ে পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী শিকারের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর ফলে একদিকে যেমন মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহতসহ চলনবিলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে পানি দ্রুত নামতে না পারায় ইরি ধানের বীজতলাসহ গম, ভুট্টা, সরিষা ও করলার চাষাবাদ নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছে চলনবিলের লক্ষাধিক কৃষক।

এদিকে সুতি মালিকরা তাদের অবৈধ জাল বাচাতে সিংড়ার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জহুরুল হকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর অধিকাংশ সুতি থেকে মাছ ও টাকা যায় ওই অভিযুক্ত মৎস্য কর্মকর্তার বাড়িতে। সিংড়া মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই কতুয়াবাড়ীর আজাহার আলীর সুতি থেকে ওই কর্মকর্তার ব্যাগে মাছ যাচ্ছে।

শস্যভাণ্ডার খ্যাত হিসেবে পরিচিত সিংড়ার আত্রাই নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কতুয়াবাড়ী, চাদপুর ও বলিয়াবাড়ী এলাকায় আত্রাই নদী জুড়ে পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী নিধন করা হচ্ছে। এটি এতটাই নিশ্ছিদ্র যে জলজ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত আটকা পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানান, চাদপুর এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে আত্রাই নদীর পানি আটকে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করছে ক্লাবে সভাপতি এসএম রানা ও সাধারণ সম্পাদক টাইগারসহ স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। কতুয়াবাড়ী বাগানবাড়ী এলাকায় নদী দখল করে মাছ শিকার করছেন সোহাগবাড়ী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলী। কতুয়াবাড়ী-পাটকোল লোহার ব্রিজে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান। বলিয়াবাড়ী লোহার ব্রিজের উজানে সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন। চাঁদপুর ভাঙনে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছেন আওয়ামী লীগ কর্মী রাজু আহমেদ।

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি টাইগার ঢাকাটাইমসকে বলেন, তারা মাসখানেক ধরে সাইনবোর্ড টানিয়ে ক্লাবের উন্নয়নে এই বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে ক্লাব করে বাঁধ দিয়ে পানি আটক মাছ শিকার করা কি বৈধ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে কী বৈধ আছে? সবকিছুই তো অবৈধ? তাইসহ ওই ক্লাবের ছেলেরা মাছের টাকাগুলো দিয়ে এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। আর এই পৃথিবীতে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, তার এলাকায় দুটি সুতি চলছে। এতে দলীয় ছেলেরা জড়িত রয়েছে। তাদেরকে নিষেধ করলেও শোনে না। আর এবিষয়টি তিনি মৎস্য কর্মকর্তাকে অবগতও করেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আত্রাই নদীতে বাঁধ ও সুতিজাল দিয়ে এভাবে পানি আটকে মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় ও জলজ প্রাণী শিকারে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা এলাকাবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তবে এর সাথে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় এটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, তিনি এই বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন। এ পর্যন্ত আত্রাই ও গুড়নদীসহ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টি মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছেন। মৎস্য বিভাগের বাজেট না থাকায় আর কোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সুতির সাথে জড়িত সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বানার বাঁধ ও সুতিজাল ধ্বংস করা হয়েছে। আর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস বিভাগ এবিষয়ে যথেষ্ট তৎপর। তবে কৃষকের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এমন কোনো বাঁধ বা সুতি থাকলে জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :