কেউ মনে রাখেনি আব্দুল জব্বারকে

বাংলাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বার। পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন মাস দুয়েক হল। এরই মধ্যে তিনি মুছে গেছেন মানুষের স্মৃতির পাতা থেকে। আজ এই কিংবদন্তী শিল্পীর জন্মদিন। অথচ তাঁকে নিয়ে নেই কোনো খবর। সঙ্গীতাঙ্গণেও নেই কোনো আয়োজন।

১৯৩৮ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ায় জন্মেছিলেন আব্দুল জব্বার। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের নিকট।

১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তালিকাভুক্ত হন আব্দুল জব্বার। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান এই কিংবদন্তী শিল্পী।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের সময়কালে তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন।

তৎকালীন সময়ে কলকাতাতে অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প ঘুরে হারমোনি বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন আব্দুল জব্বার। যা মুক্তিযুদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল। সেসময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন।

সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদক, ২০১১ সালে আজীবন সম্মাননা এবং জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আব্দুল জব্বার। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ আগস্ট তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। গত ৩০ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কিংবদন্তী শিল্পীর জন্মদিনে তাঁর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও দোয়া। আপন ঠিকানায় ভালো থেকো হে কিংবদন্তী।

ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এএইচ