উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি দ্বন্দ্বে কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চিত

মাহফুজ কিশোর, কুবি প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১৪

‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নিয়ে বিভ্রান্তি, উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়োগ-বাণিজ্যসহ দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক সমিতির টানা আন্দোলন, দীর্ঘদিনেও এসব বিষয়ে কোনো ধরনের মীমাংসা না হওয়ায় চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় (কুবি)।

এসব ঘটনার সর্বশেষ জের এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়া। আর এ জন্য পরস্পরকে দুষছেন উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ওই ভর্তি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ। তিনি দাবি করছেন,বাধ্য হয়ে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে।

তার কার্যালয় তিন সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ- এ কথা উল্লেখ করে উপাচার্য ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য একাধিক সভা-সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় যা এই অবস্থায় কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে।’ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় শিক্ষক সমিতির ওপর বর্তাবে বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য।

উপাচার্যের অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের দাবি করেন, ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা ছিল। বরং উপাচার্য ভর্তিচ্ছুদের জিম্মি করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছি। এই অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল। কিন্তু উপাচার্য ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে দিলেন। এতে করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরোক্ষভাবে জিম্মি করা হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতি গত ১৬ অক্টোবর থেকে তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

শিক্ষকদের আরেকটি অংশ আবার উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষকদের বিবদমান দুটি পক্ষ এবার মুখোমুখি মানববন্ধন করেছে। আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বেলা একটায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে দুই সারিতে মুখোমুখি হয়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা।

‘অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়’ ব্যানারে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাদের অভিযোগ, উপাচার্য ভর্তিচ্ছুদের জিম্মি করে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। আর এতে তাকে সহযোগিতা করেছে উপাচার্যপন্থী কিছু ‘দুষ্কৃতকারী’ শিক্ষক। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় মানববন্ধনে।

উল্টোদিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের মানববন্ধনে দাবি করা হয়, শিক্ষক সমিতির নামে কতিপয় শিক্ষকের অশোভন আচরণ ও অসহযোগিতার কারণে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

মুখোমুখি অবস্থায় এই মানববন্ধন দেখে সেখানে জড়ো হন অনেক কৌতূহলী শিক্ষার্থী। মানববন্ধনের বিবদমান শিক্ষকদের আক্রমণাত্মক ও পাল্টাপাল্টি বিষোদগারে উষ্মা প্রকাশ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে যদি ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হয় তবে তাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ রাখব, নিজেদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দিতে।’

(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :